তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে গণহত্যা ফের শুরু করার অজুহাত খুঁজছেন।
শুক্রবার আঙ্কারায় এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগুস সাখনার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফিদান বলেন,
“দীর্ঘস্থায়ী শান্তির আশা টিকিয়ে রাখতে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের অবশ্যই যুদ্ধবিরতি মেনে চলা উচিত।”
তিনি আরও জানান, তুরস্ক শারম আল–শেখ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দায়িত্ব নিয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতীক। “আঙ্কারা এখন যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করতে সংশ্লিষ্ট সব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে,” বলেন ফিদান।
মানবিক সহায়তায় তুরস্কের সক্রিয় ভূমিকা
ফিদান জানান, তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, রেড ক্রিসেন্ট ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এএফএডি’র কর্মকর্তা–কর্মচারীরা রাফাহ সীমান্তে দিনরাত কাজ করছেন।
তুরস্কের ৯০০ টন সহায়তাসামগ্রী নিয়ে একটি জাহাজ ১৭ অক্টোবর মিসরের আল–আরিশ বন্দরে পৌঁছেছে। পরবর্তী সহায়তা মিশনের প্রস্তুতিও চলছে।
তিনি বলেন, “তুরস্ক আহত ফিলিস্তিনিদের দেশে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। ধৈর্য ও ঐক্যের মাধ্যমে গাজা আবার ঘুরে দাঁড়াবে।”
এস্তোনিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক ঐক্য ও মানবিক অবস্থান
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগুস সাখনা বলেন,
“গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। ইসরায়েলের ওপর এখন শক্ত চাপ প্রয়োগ করা জরুরি।”
তিনি জানান, এস্তোনিয়া জাতিসংঘের ফিলিস্তিন–সংক্রান্ত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং ইউএনআরডব্লিউএসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাঠাচ্ছে।
গাজা শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আঞ্চলিক বৈঠক
ফিদান জানান, গাজা ইস্যুতে অগ্রগতি পর্যালোচনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, পাকিস্তান ও মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ৩ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে বৈঠকে বসবেন।
তিনি আরও বলেন, সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে এসব দেশ গাজা শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তি গড়ে তুলেছিল।
“এই প্রক্রিয়া এক মুহূর্তের জন্যও উপেক্ষা করা যাবে না,” — যোগ করেন ফিদান।
এস্তোনিয়া–তুরস্ক সম্পর্ক জোরদারে নতুন অধ্যায়
মারগুস সাখনা তুরস্ককে ইউরোপীয় নিরাপত্তা কর্মসূচির (SAFE) গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “তুরস্ক একটি শক্তিশালী ও অমূল্য সহযোগী।”
রাশিয়ার যুদ্ধবিমান যখন এস্তোনিয়া ও ন্যাটোর আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল, তখন তুরস্কই প্রথম তাদের পাশে দাঁড়ায়—এ কথা স্মরণ করিয়ে দেন সাখনা।
আগামী বছরও তুরস্ক ন্যাটোর বিমান প্রতিরক্ষা মিশনে অংশ নেবে বলে জানান তিনি।
তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্যপদে অগ্রগতি
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানান, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সবসময় তুরস্ক–ইইউ সম্পর্ক জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কাস্টমস ইউনিয়ন হালনাগাদ, ভিসা সংলাপ এবং তুর্কি নাগরিকদের ভিসা–সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে আলোচনাও চলছে।
সম্প্রতি জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সফরে এরদোয়ান ও মের্জ তুরস্কের ইইউ সদস্যপদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে জানান ফিদান।
তিনি আরও বলেন, সিরিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তুরস্ক বাস্তব প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এবং ১০ মার্চের চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দেশের ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।
মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি:
তুরস্কের এই অবস্থান গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এক দৃঢ় আহ্বান। ফিদানের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে—শুধু অস্ত্রবিরতি নয়, মানবতার জয়ের জন্যই আজ বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।