• হোম > বিদেশ > ইয়েছ ব্যাংক কেলেঙ্কারি: সিবিয়াই চার্জশিটে অনিল আম্বানি

ইয়েছ ব্যাংক কেলেঙ্কারি: সিবিয়াই চার্জশিটে অনিল আম্বানি

  • শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৬
  • ৪৮

---

ভারতের আলোচিত ইয়েছ ব্যাংক দুর্নীতি মামলা নতুন মোড় নিয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এক বিস্তৃত অভিযোগপত্রে জানিয়েছে—ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা রানা কাপুরের পরিবারকে বেআইনিভাবে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অনুমোদন দেন শিল্পপতি অনিল আম্বানি। সংস্থাটি বলছে, আম্বানির এই অনুমোদনের ফলে ইয়েছ ব্যাংকের প্রায় ২,৭৯৬.৭৭ কোটি রুপি লোকসান হয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, রানা কাপুর জানতেন যে এসব বিনিয়োগের কোনো দ্বিতীয় বাজার বা বাস্তব আর্থিক সুরক্ষা নেই। তবুও অনিল আম্বানির সম্মতিতে ঝুঁকিপূর্ণ এই বিনিয়োগ করা হয়।


কোটি টাকার বিনিয়োগ, ভয়াবহ ক্ষতি

২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইয়েছ ব্যাংক বিনিয়োগ করে—

  • ২,৯৬৫ কোটি রুপি রিলায়েন্স হোম ফাইন্যান্স লিমিটেডে (RHFL)

  • ২,০৪৫ কোটি রুপি রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ফাইন্যান্স লিমিটেডে (RCFL)

দুই প্রতিষ্ঠানই অনিল ধীরুভাই আম্বানি গ্রুপ (ADAG)-এর অংশ। ২০১৯ সালের শেষে এসব বিনিয়োগ অকার্যকর সম্পদে (NPA) পরিণত হয়, ফলে ব্যাংকের ৩,৩০০ কোটিরও বেশি রুপি আটকে যায়।


দুই এফআইআর ও দুর্নীতির ছক

২০২০ সালের নভেম্বরে ইয়েছ ব্যাংকের প্রধান সতর্কতা কর্মকর্তা (CVO)-এর অভিযোগের ভিত্তিতে দুইটি এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। এতে অনিল আম্বানি, রানা কাপুর এবং কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।


রানা কাপুর পরিবারের প্রতিষ্ঠানে ঋণ বরাদ্দ

একই সময়ে RHFL ও RCFL থেকে কাপুর পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়—

  • র‍্যাব এন্টারপ্রাইজেস (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেড এবং ব্লিস হাউস প্রাইভেট লিমিটেড—প্রতিটিতে ৬০ কোটি রুপি।

  • র‍্যাব এন্টারপ্রাইজেস ও ইমাজিন এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড—প্রতিটিতে ২২৫ কোটি রুপি।

এসব ঋণ দেওয়া হয় বার্ষিক ৯.২৫% সুদে, কোনো মাঠপর্যায়ের যাচাই ছাড়াই।


ব্যক্তিগত বৈঠক ও পারস্পরিক সুবিধা

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অনিল আম্বানি ও রানা কাপুরের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাঁরা প্রায়ই ব্যাংক কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে ব্যক্তিগত বৈঠক করতেন। এসব বৈঠকের পর রানা কাপুর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিতেন, “সমঝোতা অনুযায়ী” আম্বানির প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুমোদন করতে।
অন্যদিকে, অনিল আম্বানি তাঁর কর্মকর্তাদের বলতেন কাপুর পরিবারের কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণ শর্ত শিথিল করতে।


রিলায়েন্স নিপ্পন মিউচুয়াল ফান্ডের অপব্যবহার

সিবিআই জানিয়েছে, অনিল আম্বানি রিলায়েন্স নিপ্পন মিউচুয়াল ফান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুমোদনবিহীন বৈঠক করতেন। এসব বৈঠকে অংশ নিতেন তাঁর ছেলে জয় অনমোল আম্বানিও।
ইমেইলের মাধ্যমে জাপানি অংশীদারদের এসব সিদ্ধান্ত থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে রাখা হতো।

তদন্তে দেখা গেছে, ADAG গ্রুপের অধীনে শেল কোম্পানি তৈরি করে এসব ঋণের অর্থ বিভিন্নভাবে গ্রুপের ঋণ শোধে ব্যবহার করা হয়।


স্বার্থের সংঘাত ও গোপনীয়তা

সিবিআইয়ের অভিযোগ—রানা কাপুর হ্যাঁ ব্যাংকের বোর্ডকে কখনো জানাননি যে তাঁর পরিবারের প্রতিষ্ঠানগুলো ADAG-এর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। তিনি শুধু বলেন, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েরা ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। এভাবে তিনি স্বার্থের সংঘাত গোপন করেন।


পরবর্তী তদন্তে অনমোল আম্বানি

সিবিআই এখন তদন্ত করছে, জয় অনমোল আম্বানি—যিনি তখন রিলায়েন্স ক্যাপিটালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন—তিনি কীভাবে রিলায়েন্স নিপ্পন মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে প্রভাব রেখেছিলেন, বিশেষত ইয়েছ ব্যাংক ও মরগান ক্রেডিটস প্রাইভেট লিমিটেডে (রানা কাপুরের মেয়েদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান)।


মানবিক দৃষ্টিকোণ

এই ঘটনার পর ভারতে ব্যাংকিং খাতে বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে। সাধারণ আমানতকারীরা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও ইয়েছ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্নীতির এমন চক্র ভাঙতে না পারলে ভবিষ্যতে আর্থিক নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—ব্যাংক পরিচালনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নৈতিকতা নিশ্চিত করাই হতে হবে পরবর্তী পদক্ষেপের কেন্দ্রবিন্দু।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6184 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:31:18 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh