ভেনেজুয়েলায় হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই—এমন স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল—ওয়াশিংটন হয়তো কারাকাসে সরকার পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে—ট্রাম্পের বক্তব্যে সেই জল্পনা আপাতত প্রশমিত হয়েছে।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক তৎপরতা
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে নৌবাহিনীর আটটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। একই সঙ্গে পুয়ের্তো রিকোতে রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে এবং একটি বিমানবাহী রণতরী বহর (Aircraft Carrier Strike Group) অঞ্চলটির দিকে অগ্রসর হয়েছে।
পুয়ের্তো রিকো যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তাই এই মোতায়েনের অর্থ হচ্ছে—ওয়াশিংটন এখন সরাসরি ভেনেজুয়েলার উপকূলের নিকটেই এক বৃহৎ সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে।
তবে হোয়াইট হাউসের দাবি, এর উদ্দেশ্য সরকার পরিবর্তন নয়, বরং মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করা।
‘না, হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই’—ট্রাম্প
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ফ্লোরিডা গমনের পথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন—“আপনি কি ভেনেজুয়েলায় হামলার কথা বিবেচনা করছেন?”
উত্তরে ট্রাম্প সংক্ষিপ্তভাবে বলেন,
“না।”
ট্রাম্প সেই সময় মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ থেকে ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছিলেন।
‘মাদকবিরোধী অভিযান’ নাকি রাজনৈতিক প্রভাব?
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবেই এসব সামরিক তৎপরতা।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬২ জন নিহত, ১৪টি নৌযান ও একটি আধা-ডুবোজাহাজ ধ্বংস হয়েছে।
ওয়াশিংটন জানিয়েছে, এসব নৌযান মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
“চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও এসব হামলা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতোই।”
ভেনেজুয়েলার আকাশে বোমারু বিমানের চক্কর
ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় অঞ্চলের আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের বি-৫২ ও বি-১বি বোমারু বিমান সম্প্রতি টহল দিয়েছে।
গত সোমবারও ওই এলাকায় এসব যুদ্ধবিমানকে চক্কর দিতে দেখা গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একধরনের “কৌশলগত চাপ” সৃষ্টি করতে চাচ্ছে মাদুরো প্রশাসনের ওপর।
মাদুরোর অভিযোগ: ‘কৃত্রিম যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করছে ওয়াশিংটন’
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে তার দেশের সীমান্তে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন,
“ওয়াশিংটন সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে এবং কৃত্রিম যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে ক্যারিবীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।”
মাদুরোর দাবি, এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং লাতিন আমেরিকার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের কয়েকজন কূটনীতিক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক উপস্থিতি নিয়ে বেশ কয়েকটি লাতিন আমেরিকান দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াশিংটন ও কারাকাসের সম্পর্ক ক্রমেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে—যা ভবিষ্যতে নতুন ভূ-রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।