মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নতুন করে কঠোর শর্ত আরোপ করেছে দেশটির সরকার। এবার রিক্রুটিং এজেন্টদের অন্তত তিনটি দেশে ৩ হাজারের বেশি কর্মী পাঠানোর রেকর্ড এবং নূন্যতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া ১০ হাজার বর্গফুটের স্থায়ী অফিস রাখার বাধ্যবাধকতাও যুক্ত করা হয়েছে।
তবে এই নতুন শর্তগুলোকে অবাস্তব, অযৌক্তিক এবং সিন্ডিকেট চক্রের প্রভাবিত সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।
জনপ্রিয় গন্তব্য মালয়েশিয়া
ভালো বেতন কাঠামো, স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন এবং বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া বাংলাদেশি কর্মীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। বর্তমানে দেশটিতে ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন।
গত বছর কলিং ভিসায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। তবে প্রতি দফায়ই সেখানে কর্মী নিয়োগে অনিয়ম ও সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠে এসেছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়, কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন এবং জাল ভিসার মতো সমস্যায় পড়েছেন বহু প্রবাসী শ্রমিক।
নতুন শর্তে ক্ষোভ রপ্তানিকারকদের
২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমোদন পায় ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল—৫–৬ লাখ টাকা নিয়েও অন্তত ১৮ হাজার শ্রমিককে পাঠানো হয়নি।
নতুন নির্দেশনায় মালয়েশিয়া সরকার জানিয়েছে,
রিক্রুটিং এজেন্টদের—
-
কমপক্ষে তিনটি দেশে কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে,
-
মালয়েশিয়ায় ৩ হাজারের বেশি কর্মী পাঠানোর রেকর্ড থাকতে হবে,
-
১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্থায়ী অফিস থাকতে হবে,
-
এবং এসব শর্ত পূরণের প্রমাণ আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন,
“এই শর্তগুলো বাস্তবসম্মত নয়। সিন্ডিকেটের সদস্য ছাড়া আর কেউ এই মানদণ্ড পূরণ করতে পারবে না। ফলে নতুন ও দক্ষ এজেন্সিগুলো বাদ পড়বে। সরকারকে এই বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা উচিত।”
বায়রার সাবেক মহাসচিব এম. এ. এইচ. সেলিম বলেন,
“রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসের আয়তন কত হবে, সেটা বাংলাদেশ সরকার নির্ধারণ করবে—মালয়েশিয়া নয়। এটা স্পষ্ট যে, এই শর্তগুলো পুরনো সিন্ডিকেটের সদস্যরাই নিজেদের স্বার্থে চাপিয়ে দিয়েছে।”
সিন্ডিকেটের ছায়া ও প্রবাসীদের শঙ্কা
বছরের পর বছর ধরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কিছু প্রভাবশালী সিন্ডিকেট একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে বলে অভিযোগ। তারা নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজারে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত করছে।
ফলে প্রকৃত শ্রমিকদের পকেট থেকে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত লাখ লাখ টাকা, আর অনেকেই প্রতারিত হয়ে বিদেশে গিয়ে কাজ হারাচ্ছেন বা ফিরছেন খালি হাতে।
প্রবাসী শ্রমিকদের পরিবার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই শর্তগুলো শ্রমিক পাঠানো আরও জটিল ও ব্যয়বহুল করে তুলবে, যা স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের জন্য “বিপর্যয়কর আঘাত” হতে পারে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
মালয়েশিয়া সরকার জানিয়েছে, শর্ত পূরণে সক্ষম এজেন্সিগুলোকেই কেবল ভবিষ্যতে শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে শিগগিরই।