• হোম > রাজনীতি > সংস্কার বনাম নির্বাচন: বিএনপির দ্বিধার ভারসাম্য

সংস্কার বনাম নির্বাচন: বিএনপির দ্বিধার ভারসাম্য

  • শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২৩
  • ৬১

---

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার বাস্তবায়নের সুপারিশে বিএনপি এখন এক ধরনের কৌশলগত দ্বিধার মধ্যে পড়েছে। দলটি গত দুই দিনে কমিশনের কিছু সুপারিশের কড়া সমালোচনা করলেও পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানের মতো অবস্থান নিতে পারছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি দলটিকে ‘সংস্কারবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে বাধ্য করছে, আবার সুপারিশ মেনে নিলে তা রাজনৈতিক পরাজয় হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা সামনে রেখে সংস্কার বাস্তবায়নের সুপারিশগুলো দলের জন্য এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে, আর মেনে নিলে দলের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির নেতারা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিকবার আলোচনা করেছেন। দলটি আপাতত সংযমী অবস্থান বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে জাতীয় নির্বাচনটি সময়মতো হয় এবং দলের রাজনৈতিক অবস্থানও অক্ষুণ্ন থাকে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, “প্রত্যাখ্যানের কথা তো আমরা বলিনি। প্রয়োজনে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবারও আমাদের মতামত উপস্থাপন করব।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমরা চাই দেশ বাঁচুক। নির্বাচন যেন ঠিক সময়ে হয়, সেটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখালে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপির সংযমী অবস্থান এই মুহূর্তে একটি কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা। দলটি একদিকে সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, অন্যদিকে পুরো প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখছে না। তবে এই সংযম কতটা কার্যকর হবে, তা মূলত সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে।

তবে রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপির পরিস্থিতি এক ধরণের ‘উভয় সংকট’। কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার কার্যত দুর্বল অবস্থায় পড়বে। তবে বিএনপির ভেতরে এক ধরণের ব্যতিক্রমী মতও আছে—সুপারিশ মেনে নির্বাচনমুখী হওয়া। অনেক নেতা মনে করেন, মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করাই কৌশলগতভাবে সঠিক পদক্ষেপ।

এদিকে বিএনপি জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে ভিন্নমত স্থাপন করেছে। কমিশনের সুপারিশে গণভোটের সময়, ভিন্নমতের উল্লেখ না করা এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম—এই তিনটি বিষয়ে দলের আপত্তি রয়েছে।

দেশের রাজনীতিতে এই ধারা দেখাচ্ছে যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কতটা জটিল একটি প্রক্রিয়া। বিএনপি আপাতত সংযমী অবস্থান নিয়েছে, কিন্তু সরকারের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী দলটি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6160 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:30:33 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh