যুদ্ধবিরতি যেন কেবল কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে—গাজার আকাশে এখনও আগুন ঝরাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বিমান। দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি এখন এক করুণ প্রতিদিনের দৃশ্য। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় ভোররাতে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় কয়েকটি ঘরবাড়ি। নিহতদের মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশুরাও।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬০০ জন। ধ্বংস হয়ে গেছে স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র ও চিকিৎসা কেন্দ্র। গাজার অনেক পরিবার এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে মরিয়া।
মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও যুদ্ধবিরতির পর কিছুটা চালু হলেও ইসরাইলি অবরোধের কারণে তা সীমিত। খাদ্য, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে প্রতিদিন বাড়ছে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজার শিশু ও প্রবীণরা এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে।
এদিকে হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে আরও দুই ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে। তবে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, তাদের কাছে এখনও ১১ জিম্মির মরদেহ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি হামাস যুদ্ধবিরতিকে গুরুত্ব না দেয়, তবে ইসরাইল আরও কঠোর জবাব দেবে।”
তবে এই হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, “ইসরাইল যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহার ও গণহত্যা ব্যবহার করছে, যা মানবতার চরম লঙ্ঘন।”
গাজায় মানবিক সংকট লাঘবে যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে ৫০ লাখ ডলারের সহায়তা। জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন সার্ভিসের মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় হবে অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ অপসারণে। যুদ্ধ চলাকালীন গাজায় ফেলা হয়েছে প্রায় ৭,৫০০ টন বোমা ও গোলা—যা এখন শিশুদের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলছে।
প্রতিদিনের এই সহিংসতা ও মৃত্যু যেন পৃথিবীর বিবেককে নাড়িয়ে দিচ্ছে। তবুও আন্তর্জাতিক সমাজের নীরবতা প্রশ্ন তুলছে—মানবতা কি এখন আর গাজার দরজায় পৌঁছায় না?