নির্বাচনী প্রতীকের তালিকায় নতুন যুক্ত হওয়া ‘শাপলা কলি’ নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিতর্কের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন,
“‘শাপলা কলি’ আর ‘শাপলা’ এক নয়—এ দুটি ভিন্ন প্রতীক। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।”
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত চার মাস ধরে ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে।
এনসিপি দাবি করেছিল, তাদের পুরোনো প্রতীক “শাপলা” পুনর্বহাল করতে হবে। তবে কমিশন সম্প্রতি প্রকাশিত সংশোধিত তফসিলে যুক্ত করেছে ‘শাপলা কলি’, যা নতুন একটি প্রতীক হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
ইসি সচিবের ব্যাখ্যা: “দু’টি প্রতীক সম্পূর্ণ আলাদা”
‘ইসি কোন বিধির আলোকে “শাপলা কলি” যুক্ত করেছে?’—এমন প্রশ্নে সিনিয়র সচিব বলেন,
“ইলেকশন কমিশন মনে করেছে যে ‘শাপলা কলি’ রাখা যেতে পারে। এটা কারও দাবির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক না। এনসিপি ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়েছিল, কিন্তু দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা আমার মনে হয় ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না।”
তিনি আরও বলেন,
“নতুন প্রতীকগুলো যুক্ত করার সময় ‘শাপলা কলি’ রাখা হয়েছে। ‘শাপলা’ আর ‘শাপলা কলি’র মধ্যে চাক্ষুষ পার্থক্য আছে—এটি কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টির মতো বিষয় নয়।”
প্রতীকের সংখ্যা এখন ১১৯
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, কমিশন নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিল সংশোধন করেছে। পূর্বে মোট ১১৫টি প্রতীক ছিল, সেখান থেকে ১৬টি প্রতীক বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন কিছু প্রতীক যুক্ত করে এখন মোট ১১৯টি প্রতীক রয়েছে।
তিনি বলেন,
“কিছু প্রতীক নিয়ে বিরূপ মতামত এসেছে। কমিশন বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কিছু সংশোধন করেছে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও সংশোধন করা হতে পারে। এটি কোনো স্থায়ী বা অপরিবর্তনীয় বিষয় নয়। আইন অনুযায়ী কমিশনের এখতিয়ার আছে।”
চাপের অভিযোগ অস্বীকার করল ইসি
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে, এনসিপির চাপেই কি ‘শাপলা কলি’ যুক্ত হয়েছে—এমন ইঙ্গিতের জবাবে সচিব স্পষ্ট করে বলেন,
“নির্বাচনের তিনটি মূল অংশ—রাজনৈতিক দল, ভোটার ও নির্বাচন কমিশন।
এই তিনটি পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, এর মানে এই নয় যে কমিশন কোনো চাপের মধ্যে আছে।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা চাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও আস্থা বজায় থাকুক।”
পটভূমি: প্রতীকের গুরুত্ব ও ভোটারের মনস্তত্ত্ব
বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই প্রতীকের রাজনীতি।
একটি প্রতীক কেবল ভোটের চিহ্ন নয়—এটি প্রার্থীর পরিচয়, দলীয় ইতিহাস এবং ভোটারের মনে আবেগের প্রতিফলন।
‘শাপলা’ প্রতীকটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। ফলে নতুন প্রতীক ‘শাপলা কলি’ যুক্ত হওয়ায় অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।
তবে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে ‘শাপলা কলি’ সম্পূর্ণ আলাদা প্রতীক, এবং এটি নতুন ডিজাইনে নির্বাচনী তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বিশ্লেষণ: প্রতীকের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,
প্রতীকের ব্যবহার শুধু প্রশাসনিক বিষয় নয়, বরং এটি ভোটারদের আবেগ, আস্থা ও দলীয় সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত।
তাই প্রতীক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ন্যায় বজায় রাখা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অন্যতম মানবিক দিক।
একজন ভোটার বলেন,
“আমরা চাই প্রতীকের মাধ্যমে সহজে আমাদের প্রার্থীকে চিনতে পারি। প্রতীকে বিভ্রান্তি যেন না থাকে—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
উপসংহার
‘শাপলা’ ও ‘শাপলা কলি’ নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দিকেই ইঙ্গিত দেয়।
যদিও প্রতীক বিতর্ক বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন নয়, এবার কমিশনের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে—তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এবং প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতেও সংশোধন করবে।
একটি প্রতীকের পার্থক্য হয়তো আকারে ছোট, কিন্তু অর্থে—এটি গণতন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীকও বটে।