• হোম > অর্থনীতি > বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত: রূপান্তরের সংকট ও নীতিগত পুনর্জাগরণ

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত: রূপান্তরের সংকট ও নীতিগত পুনর্জাগরণ

  • শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪২
  • ৭৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ ও পলিসি থিংক অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টার (PTERC)-এর আয়োজিত ‘Transition of Banking Sector in Bangladesh: Challenges and the Way Forward’ গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত বক্তারা।

সংস্কার, নৈতিকতা ও আস্থার সন্ধানে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলটেবিল আলোচনার বিশ্লেষণ

Reported by the Entrepreneur Bangladesh News Desk
Featuring Zahiduzzaman Syeed, Editor-in-Chief, Entrepreneur Bangladesh & Managing Director, E-Farmers Bangladesh Ltd.

At a roundtable titled “Transition of Banking Sector in Bangladesh: Challenges and the Way Forward,” policymakers, economists, and banking experts gathered at the University of Dhaka to dissect the institutional and structural weaknesses of Bangladesh’s banking system. Speakers emphasized regulatory independence, political insulation, and restoration of trust as the cornerstones of sustainable reform. Deputy Governor Dr. Md. Kibria Ahmed underscored the moral foundations of economics, while Zahiduzzaman Syeed called for financial inclusion for grassroots farmers — bridging fintech and agritech as a tool for social equity.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ এবং পিটিইআরসি (PTERC)-এর যৌথ উদ্যোগে ‘Transition of Banking Sector in Bangladesh: Challenges and the Way Forward’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক গতকাল ২৮ অক্টোবর ২০২৫ এমবিএ ভবনের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম (শহীদুল জাহীদ)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা প্রধান অতিথি এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিটিইআরসি‘র চেয়ারম্যান মো. মাজাদুল হক। অনুষ্ঠানে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত সকল বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংকিং খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের বাস্তবতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ ও পলিসি থিংক অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টার (PTERC)-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘Transition of Banking Sector in Bangladesh: Challenges and the Way Forward’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের ব্যাংকিং খাতের কার্যকারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব, একীভূতকরণ, এবং নীতিগত সংস্কারের দিকগুলো উঠে আসে।

অধ্যাপক মাকছুদুর রহমান সরকারের মতে,

ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক নামে যে একীভূতকরণ হচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এটা ভালো সিদ্ধান্ত নয়… এই একীভূতকরণ নিঃসন্দেহে আরেকটি বিডিবিএল তৈরি করবে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) গঠনের পরিণতি এখন ইতিহাস। রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যবস্থাপনা দুর্বলতা নতুন ব্যাংকগুলোকেও একই পথে ঠেলে দিতে পারে, যদি সংস্কার বাস্তবমুখী না হয়।সরকারি অর্থে

বেসরকারি ব্যাংক উদ্ধার: বিপরীতধর্মী নীতি?

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর বিশ্লেষণ ছিল সরাসরি সমালোচনামূলক।

“বিশ্বে ভালো ব্যাংক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, সরকারি অর্থ ব্যবহার করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করা হচ্ছে—এটা কোনোভাবেই সঠিক নীতি নয়।”

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে নিজেদের দুর্বলতা নিজেরাই কাটিয়ে উঠতে হবে; বাজারের স্বাভাবিক প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক।

নীতিগত অসামঞ্জস্য ও সমন্বয়ের অভাব

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি দৌলত আকতার মালা বলেন,

আমাদের দেশের মুদ্রানীতি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত… রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে কোনো কার্যকর সমন্বয় নেই।

এই নীতিগত অসামঞ্জস্য দূর করতে মিডিয়া ও জনমতকে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তিনি তুলে ধরেন।

‘ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক’: নীতিগত দিকনির্দেশনা ও আস্থার পুনর্গঠন

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহ বলেন,

যে সব ব্যাংক ‘ভিশন ফান্ড’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেগুলো অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে… দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণই এখন সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

তিনি জানান, ‘ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করবে—এবং এর মাধ্যমে আমানতকারীদের আস্থা পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা জোরদার হবে।

ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ: নৈতিকতা, সংস্কার ও টেকসই পুনর্গঠনের দিকনির্দেশনা

আমি জানতে এসেছি, শেখাতে নয়। ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো বুঝতে হলে এর মূল কারণগুলো অনুধাবন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ বক্তৃতায় বলেন —

অর্থনৈতিক পতন কখনো আকস্মিক হয় না; এটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের ফল। নৈতিকতা বা Moral Sentiment না থাকলে অর্থনীতি স্থায়ী হতে পারে না।

তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাংকিং খাত তিন স্তরে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে — structural, legal, এবং policy reforms।

আমরা জানুয়ারি থেকে রিস্ক-বেইজড সুপারভিশন শুরু করেছি এবং IFRS 9 চালু হবে, যা ব্যাংকিং ব্যবস্থার কাঠামোই বদলে দেবে।

মুদ্রানীতির অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন,

আমাদের প্রথম লক্ষ্য অর্থনীতিকে রিস্কিউ করা এবং এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতিশীল করা… ইনফ্লেশন ইতোমধ্যে ডাবল ডিজিট থেকে ৮ শতাংশের নিচে এসেছে।

তার মতে, কনসোলিডেশন কোনো সহজ যাত্রা নয়, তবে এটি liquidation-এর তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর বিকল্প।

আমরা তিন বছরের মধ্যে সরকারকে কোটি টাকারও বেশি ইনকাম দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি উপসংহারে বলেন,

ব্যাংকিং এমন একটি ব্যবসা, যা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল… আমাদের লক্ষ্য ব্যাংক খাতের প্রতি সেই আস্থা ফিরিয়ে আনা।

জাহিদুজ্জামান সাঈদ: গ্রাসরুট কৃষকের জন্য ব্যাংকিং অন্তর্ভুক্তির আহ্বান

জাহিদুজ্জামান সাঈদ: গ্রাসরুট কৃষকের জন্য ব্যাংকিং অন্তর্ভুক্তির আহ্বান

Entrepreneur Bangladesh-এর প্রধান সম্পাদক ও ই-ফারমারস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুজ্জামান সাঈদ মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন —

আমার কাজ মূলত গ্রাসরুট লেভেলের কৃষকদের সঙ্গে। আমার লক্ষ্য হলো প্রান্তিক কৃষকের ‘অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স’ নিশ্চিত করা — বলা যায় ‘আনব্যাংক টু ব্যাংক টু দ্য মার্জিনাল ফার্মার’।

তিনি উল্লেখ করেন,

বাংলাদেশে এখনো ৭০ শতাংশ কৃষকের কাছে ব্যাংক ঋণ পৌঁছায়নি, অথচ তারাও উদ্যোক্তার মতো ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করে।

তার প্রস্তাব,

যারা এগ্রিটেক বা ফিনটেক সেক্টরে কাজ করছে, তাদের অপারেশনাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে ব্যাংকগুলো সহজেই প্রান্তিক কৃষকের কাছে পৌঁছাতে পারবে।

তিনি আরও বলেন,

২০৩৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কৃষিখাতে প্রায় ১৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে… অথচ পোস্ট-হারভেস্ট লস এখনো ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ।

ডেপুটি গভর্নরের উপস্থিতিতে তিনি সরাসরি আহ্বান জানান —

যদি আমরা ব্যবসাকে ‘সাম্যবাদী বিজনেস’-এর ধারণায় নিয়ে যেতে চাই — যেখানে ব্যবসা জনগণের উপকার করবে এবং মুনাফা দিয়ে নতুন উদ্যোগ তৈরি করবে — তাহলে ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সমাপনী বিশ্লেষণ: সংস্কারের পথে নৈতিকতা ও আস্থার পুনর্গঠন

গোলটেবিল আলোচনার সারসংক্ষেপে উঠে এসেছে —
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের রূপান্তর কেবল প্রযুক্তি বা নীতির নয়, বরং নৈতিকতা, আস্থা ও দায়বদ্ধতার পুনর্গঠন। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জবাবদিহিমূলক ব্যাংকিং কাঠামো গড়ে তোলাই টেকসই অর্থনীতির পূর্বশর্ত।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6138 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 03:35:54 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh