
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন সরগরম। অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রায় শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ইসির সূত্রে জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের প্রাথমিক সময়সূচি নির্ধারিত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও নির্বাচনী বিধান সংশোধনসহ অধিকাংশ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ শেষ। রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত হলেই শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।”
তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন। সারাদেশে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র ও ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “আমরা চাই একটি উৎসবমুখর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ভোট শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, এটি আস্থার বিষয়—সেই আস্থা পুনরুদ্ধারই আমাদের লক্ষ্য।”
এবারের নির্বাচনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে। সংশোধিত আরপিও-২০২৫ অনুযায়ী, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, ইভিএমের বাধ্যবাধকতা বাতিল, প্রার্থীর আয়–সম্পদের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক এবং নির্বাচনী জামানত বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও কঠোরতা আনছে ইসি। ভোটের আগে-পরে মোট আট দিন মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—যার মধ্যে থাকবে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ, এক লাখ সেনা ও আনসার-ভিডিপির সাড়ে পাঁচ লাখ সদস্য। পাশাপাশি ‘মিসইনফরমেশন মনিটরিং সেল’ গঠন করা হয়েছে যাতে ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ঠেকানো যায়।
প্রবাসীদের জন্য প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে “পোস্টাল ভোট বিডি” মোবাইল অ্যাপ, যার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, সৌদি আরবসহ ১১টি দেশে প্রবাসীরা ডাক ভোট দিতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহিতুল হক বলেন, “কমিশনের স্বচ্ছতা ও দৃঢ়তা থাকলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব।”
ভোটারদের উৎসাহিত করতে গ্রামীণ পর্যায়ে প্রচারণা শুরু করেছে ইসি। তরুণ ও নারী ভোটারদের বিশেষভাবে টার্গেট করে টিভি, রেডিও ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চলছে।
সব মিলিয়ে, ইসির প্রস্তুতি এখন প্রায় শতভাগ। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের ভাষায়, “এই নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আরেকটি মাইলফলক হবে—আমরা বিশ্বাস করি, প্রকৃত বিজয়ী হবে জনগণ।”