ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র জ্যামাইকায় ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মেলিসা আঘাত হেনেছে। নিউ হোপ শহরের কাছে ঘণ্টায় ১৮৫ মাইল (২৯৫ কিলোমিটার) বেগে আঘাত হানা ৫ ক্যাটাগরির এই ঝড় দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (NHC) জানিয়েছে, মেলিসার বাতাসের গতিবেগ সাফির সিম্পসন স্কেলে সর্বোচ্চ মাত্রার ৫ ক্যাটাগরির ন্যূনতম গতিবেগের চেয়ে (ঘণ্টায় ১৫৭ মাইল বা ২৫২ কিলোমিটার) বেশি ছিল।
জ্যামাইকার তাণ্ডব: পানির নিচে সেন্ট এলিজাবেথ
ঝড়ের দাপটে জ্যামাইকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সেন্ট এলিজাবেথ অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা এমন ভয়ঙ্কর ঝড়ের তাণ্ডব আগে কখনও দেখেনি।
স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাককেঞ্জি জানিয়েছেন, সেন্ট এলিজাবেথ এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং বহু রাস্তা বন্ধ রয়েছে। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছ।
ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক প্রভাব
জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হলনেস বলেছেন, “এ পর্যন্ত আমাদের তথ্য অনুযায়ী হাসপাতালগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামোও প্রভাবিত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকার এখনও কোনও মৃত্যুর নিশ্চিত খবর পায়নি, তবে ঝড়ের তীব্রতা বিবেচনা করে কিছু প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ দ্য রেডক্রস’ জানিয়েছে, প্রায় ১৫ লাখ মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কিউবার দিকে এগোচ্ছে
মেলিসা এখন কিউবার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেল বলেন, “আজ বিকেল ও সন্ধ্যায় এই ঝড়ের প্রভাব আমরা অনুভব করব। বাসিন্দাদের অবশ্যই সরিয়ে নেওয়া হবে।” তিনি সতর্ক করেছেন, “এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। আমরা জানি সাইক্লোন গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে।”
ঝড় কিউবার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর সান্তিয়াগো দে কিউবা শহরে আঘাত হানতে পারে।
ইতিহাসে বিরল ঘটনা
জ্যামাইকায় ৪ বা ৫ ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড় সরাসরি আঘাত হানা নতুন ঘটনা। অ্যাকুওয়েদারের আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছে, মেলিসা ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানা তৃতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়। এর আগে ২০০৫ সালে উইলমা এবং ১৯৮৮ সালে গিলবার্ট নামের শক্তিশালী ঝড় আঘাত হেনেছিল।
মেলিসার তাণ্ডবের কারণে জ্যামাইকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মানুষের জীবন ও বসবাসের ওপর বিশাল প্রভাব পড়েছে।