• হোম > বিদেশ > যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা গাজায়

যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা গাজায়

  • বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৬
  • ৪৩

---

গাজা উপত্যকা থেকে বিশেষ প্রতিবেদন — ইসরায়েলি সঙ্ঘর্ষ ও হামলার সর্বশেষ ঘটনায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় গতকাল(মঙ্গলবার) ব্যাপক বিমান ও স্থল হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন; তবে স্থানীয় সরকারি সূত্র বলছে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া পর থেকে সামগ্রিক হিসাব অনুযায়ী গাজায় নিহতের সংখ্যা আরও বেশি—ইতিমধ্যেই ৯৪ জনকে ছাড়িয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে। হামলার ফলে হাসপাতাল, আবাসিক এলাকা ও উদ্ধারকার্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে এবং স্থানীয় চিকিৎসা ও নাগরিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর অসম্ভব চাপে পড়েছে।

হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসের পরষ্ঠতায় সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে। উত্তর গাজা সিটির সাবরা এলাকার একটি আবাসিক ভবন ও দক্ষিণের খান ইউনিস এলাকায় উদ্বাস্তু ও পরিবারের মর্যাদা বজায় রেখে বসবাসকারীরা সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে; প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধারকাজ সারারাত ধরে চলে — গুরুতরভাবে আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন। আল-শিফা হাসপাতালে পেছনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার ঘটনায় বলা হয়েছে ‘বড় বিস্ফোরণ’ ঘটেছে, যা হাসপাতালে থাকা রোগী ও কর্মীদের মধ্যে ভীতির বড় ঢেউ নিয়ে আসে।

প্রাথমিকভাবে খবরটি টাটকা ছিল—কয়েকজন নিহত হয়েছে—কিন্তু দ্রুতই নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং উদ্ধারকার্য জটিলতায় পড়ে। স্থানীয় সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে আহত ও নিহতদের উদ্ধারে চেষ্টা করেন; রাতভর চলছে তল্লাশি ও খোঁড়াখুঁড়ি, অভ্যন্তরীণ পথসমূহ বিপর্যস্ত এবং ত্রাণ সরবরাহ সীমিত। ডাক্তাররা সতর্ক করেন—চিকিৎসা সরঞ্জাম, রক্তরক্ত, ওষুধ এবং নিরাপদ শয্যার তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং গাজার সীমিত অবকাঠামো এই ধরনের হামলার সামনে বাস্তুস্থিতি হারাচ্ছে।

আলোচ্য হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলের শীর্ষ নেতৃত্বে সতর্ক বক্তব্য এসেছে—প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে ‘শক্তিশালী হামলা’ চালানোর নির্দেশ দেন; প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হামাসকে দায়ী করে বলেছেন, রাফাহে সেনাদের ওপর হামলার ঘটনা ‘চড়া মাশুল’ দাবি করে। তবে হামাস নিজ পক্ষ থেকে রাফাহে সংঘটিত হামলার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং এই সকল অভিযানকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তত্ত্বাবধানে শারম আল–শেখে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রকাশ্য লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। কাসেম ব্রিগেড যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগ করে এক পর্যায়ে জিম্মিদের মৃতদেহ হস্তান্তর স্থগিত করার ঘোষণা দেয় এবং হুশিয়ারী দিয়েছে যে ইসরায়েলের হামলা তাদের উদ্ধারকাজ ব্যাহত করবে — ফলে গাজায় থাকা আরও ১৩ জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধারে বিলম্ব ঘটতে পারে।

ওয়াশিংটন থেকে এই ঘটনাকে ‘ছোটখাটো সংঘর্ষ’ হিসেবে মূল্যায়ন করে মার্কিন উপ-রাষ্ট্রমন্ত্রী জে ডি ভ্যান্স মন্তব্য করেছেন যে, উভয় পক্ষের লঙ্ঘনের অভিযোগ সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি এখনও কার্যকর রয়েছে এবং ‘প্রেসিডেন্টের শান্তিচুক্তি টিকে থাকবে বলে তিনি মনে করেন’ — তবু তিনি মানেন, সীমাবদ্ধ ধরনের সংঘর্ষ ‘ছোটখাটো’ভাবে ঘটতে পারে এবং উত্তরদায়িত্বশীল তদন্তের প্রয়োজন আছে।

মানবিক পরিপ্রেক্ষিত: হাসপাতালে আতঙ্ক, সিটি-লাইফ স্তব্ধ
আল-জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকেই জানিয়েছেন, আল-শিফা হাসপাতালের পেছনে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে গুরুতর বিস্ফোরণ ঘটায়; এর প্রতিধ্বনি শহরের বিভিন্ন অংশে শোনা যায়। অগ্নি-সহিংসতার মাঝে হাসপাতালে রোগী, তাদের স্বজন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কিত—নিরাপদ আশ্রয়ের অনুপস্থিতি এবং জরুরি সেবা পূরণে সীমাবদ্ধতা মানুষের দুর্বিষহ কষ্টকে তীব্র করে তুলেছে। পরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত ওষুধ, রক্ত ব্যাংক এবং শয্যার সংকট দ্রুতই মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার এক কঠিন কাজ: অনেকেই খালি হাতে মাটি ও ধ্বংসাবশেষ সরাচ্ছেন; রাতে তল্লাশি চালিয়ে নিহতদের শরীর, আহত ও জীবিত বাঁচাতে কাজ করা হয়েছে। কিন্তু উন্নত সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মীর অভাবে চেষ্টা-কর্মীদের জোরেও অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাচ্ছে না।

ত্রাণ ও প্রবেশাধিকার সংকট: জীবন-রক্ষা ও মর্যাদা বজায় রাখা জরুরি
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ত্রাণ ও মেডিক্যাল কনভয়ের প্রবেশ সীমিত রাখা হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়। খাদ্য, পানি, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর প্রবাহে বাধা মানুষের জীবন-রক্ষার কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিশু, বৃদ্ধ ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার প্রয়োজনীয় রোগীদের জন্য দ্রুত এবং নিরাপদ হিউম্যানিটেরিয়ান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক—এটি কেবল জীবন বাঁচানোর বিষয় নয়, মানুষের মর্যাদা ও সীমাহীন কষ্ট কমানোর প্রশ্নও বটে।

বিশ্লেষক ও মানবাধিকার গ্রুপগুলো বারংবার বলেন, সংঘাতক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা অপরিহার্য; চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা, নাগরিক বসতি ও ত্রাণকর্মীদের নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ দরকার। নিরস্ত্রীকরণ ও পুনর্বাসন চেষ্টা ছাড়া সহনশীল উন্নতি সম্ভব নয়।

আরও পড়ার প্রয়োজন—শান্তি ও তদন্তের ডাক
হামাস ও ইসরায়েল উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত; প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই সংঘর্ষের পেছনে কে দায়ী, এবং কীভাবে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে নির্দিষ্ট প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একই সঙ্গে তাত্ক্ষণিকভাবে চালু করা প্রয়োজন জীবনবাঁচানো হিউম্যানিটেরিয়ান পথ যাতে কনভয়, চিকিৎসা সেবা ও ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রাখা যায়।

সূত্র বলছে—নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা, উভয়পক্ষের দাবি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট মিলিয়ে নিশ্চিত করতে সময় লাগবে। কিন্তু সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য সংগ্রহ, আহতদের দ্রুত চিকিৎসা, ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের নিরাপদ বসতি ও ত্রাণ উপকরণ পৌঁছে দেয়া—এগুলো এখনই করা উচিত।

সামগ্রিকভাবে, গাজায় নতুন এই তাজা হামলার ঢেউ মানুষের উপর যে মানবিক ঝড় এবং বীভৎসতা নেমে এসেছে তা অব্যাহত সংকটকে নতুন করে উত্থাপিত করেছে। শান্তি রক্ষার যেকোনও প্রচেষ্টা যদি সত্যিই ফলপ্রসূ হতে চায়, তাহলে নাগরিকদের জীবন, হাসপাতালের সুরক্ষা এবং ত্রাণের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য পথ নেই।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6053 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 08:47:00 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh