• হোম > বাংলাদেশ > ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

  • মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৫২
  • ৪৭

---

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও শক্তি সঞ্চয় করে এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে বাতাসের গতিবেগ, উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর, আর উপকূলজুড়ে শুরু হয়েছে উৎকণ্ঠা। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৬টার তথ্য অনুযায়ী পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে।


বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত

আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী সাগর এলাকা প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছে—

  • চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ১,২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে,

  • কক্সবাজার থেকে ১,২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে,

  • মোংলা বন্দর থেকে ১,১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে,

  • এবং পায়রা বন্দর থেকে ১,১৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে।


আজ সন্ধ্যা বা রাতে ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর–উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা বা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

যদিও বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি আঘাত হানার আশঙ্কা নেই, তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস এবং দমকা হাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।


উপকূলে সতর্কবার্তা: ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এর অর্থ হলো, সাগর ও উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে এবং নৌযান চলাচল বিপজ্জনক হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস বলেছে,

“উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সতর্কভাবে চলাচল করতে হবে এবং গভীর সাগরে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষেধ।”


মানবিক প্রস্তুতি ও সচেতনতা জরুরি

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় মানুষদের মধ্যে এখন চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অনেকে ইতিমধ্যে নৌকা ও জাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা উপকূলের গ্রামগুলোতে সতর্কবার্তা প্রচার ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কাজ শুরু করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন,

“এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আতঙ্ক নয়—সতর্কতা। উপকূলের মানুষ যেন সময়মতো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয় এবং গুজবে কান না দেয়।”

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী লাখো মানুষ প্রায় প্রতিবছরই এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হন। তাঁদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন মানবিক সহায়তা, দ্রুত তথ্যপ্রবাহ ও সরকারি তৎপরতা।


ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’—প্রকৃতির আরেক সতর্কবার্তা

‘মোন্থা’-এর সৃষ্টি ও শক্তি বাড়ার পেছনে উষ্ণ সাগরজল ও পরিবর্তিত জলবায়ুগত অবস্থাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে,

“জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা বাড়ছে, ফলে ঘূর্ণিঝড়গুলো আরও দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে এবং অধিক সময় ধরে টিকে থাকছে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, এটি কেবল একটি ঝড় নয়—এটি প্রকৃতির একটি সতর্কবার্তা যে, পরিবেশ ও জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় এখনই সচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে।


উপসংহার

ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ এখন প্রবল রূপ নিয়েছে—কিন্তু সতর্কতা ও প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব।
উপকূলের মানুষের জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি মানুষকেই মানবিক দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
কারণ প্রতিটি জীবন মূল্যবান, প্রতিটি পরিবার নিরাপত্তার অধিকারী।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6021 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 06:14:08 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh