আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী রাখার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা অসংখ্য মামলার কারণে এই কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে—যাতে কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলেও বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত থাকে।
কৌশলগত সিদ্ধান্ত: বিকল্প প্রার্থীর সুযোগ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন—
“যদি কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন আইনি বা প্রশাসনিক কারণে বাতিল হয়, তাহলে বিকল্প প্রার্থী দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে। তাই প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী রাখার বিষয়ে আলোচনা চলছে।”
দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল, যাতে সরকারের চাপ বা মনোনয়ন বাতিলের ফাঁদে দল প্রার্থীহীন না হয়ে যায়।
ঐক্য ও জোট গঠনের উদ্যোগ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন—
“দেশের প্রায় সব আসনেই একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। আমরা যোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। একইসঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের দিকেও কাজ চলছে।”
তিনি জানান, বিএনপি জাতীয় ঐক্যের চেতনাকে সামনে রেখে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের চিন্তা করছে, যেখানে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক শক্তিও যুক্ত হতে পারে।
তারেক রহমানের ভার্চুয়াল বৈঠক
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন।
তিনি দলীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান—
“যেকোনো পরিস্থিতিতেই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। মনোনয়ন নিয়ে উল্লাস নয়, ঐক্যই হবে শক্তি।”
তারেক রহমান স্পষ্ট করে দেন,
“বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও তাদের সমর্থকদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া যেন কোনো বিশৃঙ্খলায় না ভোগে।”
মাঠের নেতাদের প্রতিক্রিয়া
ঝিনাইদহ-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এ আর এম মামুন বলেন—
“আমাদের নেতার নির্দেশ হলো—শান্তিপূর্ণ থাকুন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, ঐক্য বজায় রাখুন।”
পিরোজপুর বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান জানান,
“তারেক রহমান স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন—মনোনয়ন পাওয়ার পর কোনো উদযাপন নয়, কোনো বিশৃঙ্খলা নয়। সবাইকে দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করতে হবে।”
রাজশাহী বিভাগের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন,
“৩৯টি আসনের প্রার্থীদের গুলশানে ডাকা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দল মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।”
বরিশাল-২ আসনের প্রার্থী কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু বলেন—
“আমরা এক অন্ধকার গহ্বরের বিরুদ্ধে লড়ছি। এই যুদ্ধে জয়ের জন্য ঐক্য অপরিহার্য।”
চূড়ান্ত তালিকা শিগগির
তারেক রহমান জানিয়েছেন, বিএনপির প্রার্থী তালিকা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। গাজীপুর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন—
“আমাদের একগুঁয়েমিকে কেউ যেন সুযোগ হিসেবে নিতে না পারে, সেই বার্তাই দিয়েছেন তারেক রহমান।”
তিনি আরও যোগ করেন—
“বিএনপি একটি বৃহৎ দল, মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতে সবার জন্য সুযোগ থাকবে।”
বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এ পদক্ষেপ আসন্ন নির্বাচনে দলীয় স্থিতিশীলতা ও আইনি ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশলগত পদক্ষেপ। একাধিক প্রার্থী রাখলে প্রশাসনিক চাপ বা মনোনয়ন বাতিলের মতো পরিস্থিতিতেও দল সক্রিয় ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকতে পারবে।