আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পূর্ণ উদ্দীপনায় প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের বৃহত্তম বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে গিয়ে চরম দ্বিধায় পড়েছে দলটি।
এই সংকট নিরসনে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ধারাবাহিকভাবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন—যেখানে উঠে আসছে ত্যাগ, আবেগ ও ঐক্যের আহ্বান।
“ত্যাগ ছাড়া বিজয় অসম্ভব”—তারেক রহমান
গত দুই দিনে বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন তারেক রহমান।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেছেন—
“দেশ, গণতন্ত্র ও দলের জন্য ত্যাগ ছাড়া কোনো বড় অর্জন আসে না। খালেদা জিয়া নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন গণতন্ত্রের জন্য—আমাদেরও সেই পথেই হাঁটতে হবে।”
সভায় উপস্থিত নেতারা জানান, তারেক রহমানের বক্তব্যে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী। পুরো বৈঠক কক্ষে নেমে আসে এক গভীর নীরবতা ও ঐক্যের অঙ্গীকার।
খালেদা জিয়ার ত্যাগের স্মরণে আবেগঘন মুহূর্ত
তারেক রহমান বৈঠকে তুলে ধরেন তার মা খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও নির্যাতনের ইতিহাস।
তিনি বলেন,
“খালেদা জিয়া চাইলেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছেন কারাগারের যন্ত্রণা, কারণ তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই থেকে পিছিয়ে আসেননি।”
বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেন, বেগম জিয়ার এই আত্মত্যাগই বিএনপির প্রেরণার উৎস, যা তাদের নির্বাচনী সংগ্রামে আরও দৃঢ় করবে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য নির্দেশনা
তারেক রহমান জানান, প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, কিন্তু দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে একজনকে নিয়েই।
তিনি বলেন,
“যিনি মনোনয়ন পাবেন, তিনি যেন কোনো আনন্দ মিছিল বা মিষ্টি বিতরণ না করেন। বরং সবার আগে গিয়ে মনোনয়ন না পাওয়া সহকর্মীর হাতে হাত রাখুন—তাঁকেই সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামুন।”
একইসঙ্গে মনোনয়নবঞ্চিতদের উদ্দেশেও বার্তা দেন তিনি—
“দল যদি জেতে, সবাই সুযোগ পাবেন। কিন্তু বিভেদ হলে সবাই হারবেন।”
“দুজন মায়ের গল্প” — ত্যাগের উপমা
বৈঠকের এক পর্যায়ে তারেক রহমান ‘দুজন মা ও এক শিশুর’ কাহিনি শোনান—
একজন মা সন্তানের ভাগাভাগি মানতে না পেরে তাকে অন্যজনকে দিয়ে দিতে রাজি হন, এতে প্রমাণ হয় তিনিই প্রকৃত মা।
এই গল্পের মাধ্যমে তিনি বোঝান—
“প্রকৃত নেতাই দলের স্বার্থে নিজের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে জানেন।”
ঐক্যের শপথ ও মাঠপর্যায়ের বার্তা
বৈঠকে থাকা নেতারা জানান, তারেক রহমানের নির্দেশে তারা একসঙ্গে শপথ নিয়েছেন—
“ধানের শীষের বিজয়ই হবে গণতন্ত্রের বিজয়।”
রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন,
“ঐক্য ধরে রাখতে পারলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। তারেক রহমান আমাদের যে বার্তা দিয়েছেন, সেটাই আমাদের নির্বাচনী প্রেরণা।”
বরিশালের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু যোগ করেন,
“১৭ বছরের নির্যাতনের জবাব আমরা দেব বিজয়ের মাধ্যমে। ধানের শীষের জয়ই হবে প্রতিশোধ।”
জনপ্রিয়তা যাচাই ও মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ
দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান সম্প্রতি দলের বাইরের জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী ও গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করেছেন।
প্রতিটি আসনে একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী চিহ্নিত হলেও, একক মনোনয়ন নীতিই বজায় রাখতে চায় বিএনপি।
এই কারণেই ধারাবাহিক মতবিনিময় চলছে, যাতে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও দল ঐক্যবদ্ধ থাকে।
রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ঐক্যের সতর্কবার্তা
বৈঠকে তারেক রহমান সতর্ক করে বলেন,
“৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পরও অদৃশ্য শক্তি ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। ১/১১-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এখন একমাত্র অস্ত্র—ঐক্য।”
তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন—
“দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে সবাই লাভবান হবে, বিভেদ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা বিএনপি।”
মাঠপর্যায়ের প্রতিশ্রুতি
মেহেরপুর-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী জাকির হোসেন বলেন,
“তারেক রহমান আমাদের বলেছেন, মনোনয়ন বড় নয়—দলই বড়। আমরা সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যেভাবেই হোক ঐক্য ধরে রাখব।”
সারসংক্ষেপ
-
বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে বৈঠক সম্পন্ন
-
তারেক রহমানের আবেগঘন ত্যাগ ও ঐক্যের আহ্বান
-
এক আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও একক মনোনয়ন নীতি
-
মনোনয়নপ্রাপ্ত ও বঞ্চিতদের পারস্পরিক সহযোগিতার নির্দেশ
-
ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয়, বিভেদে পরাজয় — তারেক রহমানের বার্তা