• হোম > বাংলাদেশ > ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ শক্তিশালী রূপে বঙ্গোপসাগরে, ২ নম্বর সংকেত চলমান

ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ শক্তিশালী রূপে বঙ্গোপসাগরে, ২ নম্বর সংকেত চলমান

  • সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪১
  • ৬৪

---

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এখন উত্তাল। সাগরের নীল জলরাশির বুকে ঘনীভূত হচ্ছে প্রকৃতির নতুন শক্তি—ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সোমবার সকালের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ও অগ্রগতি

রবিবার দিবাগত রাত ৩টায় ‘মোন্থা’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ১৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা থেকে ১২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, এবং পায়রা থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আরও ঘনীভূত হতে পারে এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যা বা রাতে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

বাতাসের বেগ ও সমুদ্রের অবস্থা

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে সাগর এখন অত্যন্ত উত্তাল—ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠে চাপের পার্থক্য তৈরি হয়েছে।

সতর্ক সংকেত ও নির্দেশনা

বর্তমানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং গভীর সাগরে না যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ইতিমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় আছে। ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা পেয়েছেন।

মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিপদের পূর্বাভাস

ঘূর্ণিঝড় মানেই শুধু প্রকৃতির রোষ নয়—এটি উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনের এক ভয়ংকর বাস্তবতা। সাগরপাড়ের মানুষ এখন শঙ্কিত, কারণ মোন্থা যদি আরও শক্তিশালী হয়, তাহলে জলোচ্ছ্বাস, বজ্রঝড় ও বৃষ্টির কারণে দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষত বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা ও কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত পরিবারগুলো এখন অপেক্ষায় আছে—কখন সাইরেন বাজবে, কখন তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হবে।

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন একটি নিম্নচাপ দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে, যা উপকূলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবিকা, মৎস্য সম্পদ ও আবাসনকে হুমকিতে ফেলছে।

সরকারের প্রস্তুতি ও জনগণের করণীয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা রাখার প্রস্তুতি চলছে। সেখানকার শিশু, নারী ও বয়স্কদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস বলেছে, “এটি এখন বাংলাদেশের উপকূলের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি নয়, তবে ঘূর্ণিঝড়ের দিক পরিবর্তন হলে তা দ্রুত পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে।” তাই জনগণকে সরকারি ঘোষণার প্রতি সজাগ ও সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এক ফোঁটা প্রস্তুতি, হাজার প্রাণের সুরক্ষা

প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেখা যায়, অনেকে নৌকা ও জাল ফেলে যেতে চান না, কেউ বাড়ি ছাড়তে দ্বিধায় থাকেন। কিন্তু একটি ছোট অবহেলাই হতে পারে জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।
সামান্য প্রস্তুতি, আগে থেকে আশ্রয়ে যাওয়া—এই ছোট সিদ্ধান্তগুলোই হাজারো প্রাণ রক্ষা করতে পারে।

এই মুহূর্তে উপকূলের মানুষের মুখে একটাই প্রার্থনা—“প্রকৃতি শান্ত হোক, সবাই নিরাপদ থাকুক।”


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5941 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 01:06:47 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh