• হোম > রাজনীতি > দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে পদত্যাগের পরামর্শ

দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে পদত্যাগের পরামর্শ

  • বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৮
  • ৫৮

---

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। তবে তাঁরা সময় চেয়ে এখনও দায়িত্বে রয়েছেন। সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এই দুই উপদেষ্টা হলেন— তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
উভয়েই তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত ছিলেন।


সরকারে থাকা না নির্বাচনে যাওয়া—দ্বিধায় দুই তরুণ

সূত্র জানায়, মাহফুজ আলম এখন পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী নন; তিনি সরকারে থেকেই দায়িত্ব পালন করতে চান।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করতে পারেন বলে জানিয়েছেন। যদিও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়।

১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন,

“নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আমি দায়িত্ব থেকে সরে যাব।”
অন্যদিকে মাহফুজ আলম ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন,
“দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি যে আমি কখন নামব, জানি না।”

এই অনিশ্চয়তা দুই তরুণ উপদেষ্টার রাজনৈতিক অবস্থান ও সরকারের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য—দুটিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।


অন্তর্বর্তী সরকারের পটভূমি

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২৩ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি।

তাদের একজন ছিলেন মো. নাহিদ ইসলাম, যিনি পরে পদত্যাগ করে গঠন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—একটি নতুন প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের সংগঠন থেকে উদ্ভূত।


রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ও বিতর্ক

সরকার ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় আছে—এই দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা এনসিপির ঘনিষ্ঠ।
তাঁরা নেপথ্যে দলটির পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৪ অক্টোবর রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকে একজন ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।

অন্যদিকে, এনসিপি নেতাদের মত হলো—

“অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় বিভিন্ন দলের নাম নিয়েই উপদেষ্টা পরিষদ করা হয়েছিল। তাহলে শুধু দুজন ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগে চাপ দেওয়া অনুচিত।”

তাঁরা এ বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকেও তুলেছেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র।


বিশ্লেষণ: ভাবমূর্তি ও নিরপেক্ষতার পরীক্ষা

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন,

“উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে যেসব বক্তব্য আসছে, তা সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। এতে জনগণের মনে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন,

“দুই ছাত্র উপদেষ্টার উচিত হয় পদত্যাগ করা, নয়তো ঘোষণা দেওয়া যে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং এনসিপির সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই।”


নির্বাচন ঘিরে বাড়ছে চাপ

সরকারের দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে বিএনপি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে দলীয় সংশ্লিষ্টদের অপসারণের দাবি জানায়, যা নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরও অভিযোগ তুলেছেন—কিছু উপদেষ্টা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

সব মিলিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হয়ে উঠেছে।


মানবিক দৃষ্টিতে

অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য ছিল একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও মানবিক নির্বাচন আয়োজন করা।
কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অনিশ্চয়তা জনগণের আস্থা নড়বড়ে করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে তা কেবল সরকার নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নের মুখে ফেলবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5834 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 10:05:41 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh