• হোম > বিদেশ > অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব বিল পাস

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব বিল পাস

  • বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২২
  • ৪৩

---

ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেট অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রস্তাবিত এক বিতর্কিত বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। এই বিল কার্যত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্তিকরণের সমান, যা আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নেসেটের ১২০ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২৫ জন পক্ষে এবং ২৪ জন বিপক্ষে ভোট দেন, বাকি সদস্যরা অনুপস্থিত বা ভোটদানে বিরত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর লিকুদ দল এ বিলের বিরোধিতা করলেও, ডানপন্থী দলগুলোর সমর্থনে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।

বিলটি এখন নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার আগে এটির আরও তিন ধাপের ভোটাভুটি বাকি রয়েছে।


আন্তর্জাতিক আইন ও দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি হুমকি

বিশ্লেষকেরা বলছেন, অধিকৃত পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার অর্থ হলো, জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরায়েল–ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে কার্যত শেষ করে দেওয়া।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা ও জেরুজালেম ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ—এগুলোকে দখল করার যে কোনো প্রচেষ্টা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।”


রাজনৈতিক বিভাজন ও মার্কিন প্রতিক্রিয়া

এই ভোট অনুষ্ঠিত হয় এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখলের অনুমতি দেবেন না।
ভোটের দিনই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি জোরদার করতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফর করছিলেন।

লিকুদ দল তাদের এক বিবৃতিতে এ ভোটকে “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক নষ্টের উদ্দেশ্যে বিরোধী দলের উসকানি” বলে বর্ণনা করেছে।


বিভক্ত সংসদ, বিভক্ত সরকার

বিলটি উত্থাপন করেন কট্টর দক্ষিণপন্থী নোআম পার্টির নেতা আভি মাওজ। যদিও তাঁর দল সরকারে নেই, তবে শাসক জোটের অংশীদার ইতামার বেন-গভিরের জিউইশ পাওয়ার ও বেজালেল স্মোট্রিচের রিলিজিয়াস জায়োনিজম পার্টি বিলটির পক্ষে ভোট দেয়।

স্মোট্রিচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন,

“আমাদের পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকারভূমি জুদিয়া ও সামারিয়ায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে।”


ফিলিস্তিনি ভূমিতে আগ্রাসন

গত আগস্টে ইসরায়েল মালে আদুমিম ও জেরুজালেমের মাঝখানে নতুন বসতি স্থাপনের অনুমোদন দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আগে থেকেই সতর্ক করেছিল, এ প্রকল্প ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ধ্বংস করবে।

ফিলিস্তিনি গ্রামগুলিতে ইসরায়েলি বাহিনীর ঘনঘন হামলা, ঘরবাড়ি ধ্বংস, জলপাইগাছ উপড়ে ফেলা ও বাস্তুচ্যুতি এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৫ সালে পশ্চিম তীরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ

নেসেটের ভোটের পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন, হামাস, কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডান।

  • ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: “ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লঙ্ঘন করছে।”

  • হামাস: “এটি দখলদার ঔপনিবেশিক শক্তির কুৎসিত চেহারা প্রকাশ করেছে।”

  • কাতার: “ফিলিস্তিনি জনগণের ঐতিহাসিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার ঘৃণ্য প্রয়াস।”

  • সৌদি আরব: “দখলদার কর্তৃপক্ষের সব ধরনের বসতি সম্প্রসারণ ও সংযুক্তিকরণ আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।”

  • জর্ডান: “এ পদক্ষেপ দুই রাষ্ট্র সমাধান নষ্ট করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।”


শান্তির সম্ভাবনা ধ্বংসের পথে

আন্তর্জাতিক আইনে পশ্চিম তীরের সব ইসরায়েলি বসতিই অবৈধ। বর্তমানে পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরজুড়ে সাত লাখের বেশি ইসরায়েলি এসব অবৈধ বসতিতে বসবাস করছেন।

২০২৪ সালে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত (ICJ) রায় দিয়েছিল,

“ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী এবং যত দ্রুত সম্ভব তা অপসারণ করতে হবে।”

কিন্তু এবার নেসেটের এই ভোট দেখিয়ে দিল, ইসরায়েল এখন আর আন্তর্জাতিক চাপকে গুরুত্ব দিচ্ছে না—বরং পশ্চিম তীর দখলের আইনি কাঠামো তৈরি করছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5828 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 11:47:49 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh