আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবার গতি এনেছে প্রার্থী চূড়ান্তের প্রক্রিয়ায়। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এ মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা চূড়ান্ত করবে তারা।
দলীয় নীতিনির্ধারকদের ভাষায়— “প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।” প্রায় ১৫০ আসনে ইতোমধ্যেই একক প্রার্থীর বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। তবে বাকি প্রায় ১০০ আসনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর কারণে এখনো জটিলতা রয়ে গেছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত
সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা, যাঁরা নির্বাচনী কৌশল, প্রার্থী বাছাই ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
বৈঠকে কয়েকজন সদস্য প্রার্থী তালিকা দ্রুত প্রকাশের আহ্বান জানান। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সময়ক্ষেপণ হলে তৃণমূল পর্যায়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিও দুর্বল হয়ে পড়বে।
একই সঙ্গে নেতারা সতর্ক করেন, বিলম্ব হলে সংগঠনগত ঐক্য ও মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে— যা নির্বাচনী মাঠে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রার্থী যাচাইয়ে পাঁচটি জরিপ
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান ইতোমধ্যেই পাঁচ দফা জরিপ সম্পন্ন করেছেন প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং জয়ের সম্ভাবনা যাচাইয়ে। এসব জরিপে বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের মতামতও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জরিপ ফলাফলের ভিত্তিতে প্রায় ১০০ আসনকে ‘সংবেদনশীল ও জটিল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে— যেখানে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
দ্বন্দ্ব মেটাতে সরাসরি নির্দেশ
দলীয় হাইকমান্ড থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে— যিনি দলীয়ভাবে মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
ঢাকায় ডাকা হয়েছে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মনোনয়নপ্রত্যাশীকে, যাঁদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিদ্যমান ছিল। তারেক রহমান সরাসরি বার্তা দিয়েছেন:
“দলীয় প্রতীক কারো ব্যক্তিগত নয়, এটি সংগঠনের মর্যাদার প্রতীক। ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, জাতীয় স্বার্থ ও দলের ঐক্যই সবচেয়ে বড়।”
গোপনীয় প্রক্রিয়া, তৃণমূলে নির্দেশনা
প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়াটি বর্তমানে গোপন রাখা হচ্ছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত প্রার্থীদের নাম গোপন রাখার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড।
দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা জানিয়েছেন, এ প্রক্রিয়া শেষ হলে প্রতিটি আসনে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ের কর্মসূচি, জনসংযোগ এবং ভোটার যোগাযোগের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াত ইসলামী
বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত স্থবির থাকায় বিএনপি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেই দেখছে। জামায়াত ইতোমধ্যেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে এবং মাঠপর্যায়ে প্রচারণাও শুরু করেছে।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এ পরিস্থিতিতে ইসলামী ভোটব্যাংকের হিসাব মেলানো ও জাতীয় পর্যায়ে জোট রাজনীতির ভারসাম্য তৈরি করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
আগামীর লড়াই প্রস্তুতি নয়, টিকে থাকার সংগ্রাম
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই প্রার্থী চূড়ান্তের প্রক্রিয়া শুধু নির্বাচনী প্রস্তুতি নয়— এটি দলের সংগঠন টিকিয়ে রাখারও কৌশল। দীর্ঘদিনের আন্দোলন, দমননীতি ও সাংগঠনিক ভাঙনের পর এ প্রক্রিয়াকে নতুন সূচনা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন,
“আমরা শুধু ভোটে অংশ নিতে চাই না— আমরা আবারও মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। এই নির্বাচনী প্রস্তুতি আমাদের জন্য অস্তিত্বের লড়াই।”