• হোম > দেশজুড়ে > ইউএসএইডের কার্যক্রম বন্ধ হওয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইউএসএইডের কার্যক্রম বন্ধ হওয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

  • মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:০০
  • ৫৮

---

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উন্নয়ন সহায়তা সংস্থা ইউএসএইড (USAID)-এর কার্যক্রম হঠাৎ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত এ সিদ্ধান্তের পর এক রাতেই প্রায় ৫০ হাজার পেশাজীবী চাকরি হারান এবং বন্ধ হয়ে যায় অসংখ্য কমিউনিটি প্রকল্প।

রোহিঙ্গা সহায়তা, নারী উন্নয়ন, শিশু সুরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ইউএসএইড দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তহবিল স্থগিত হওয়ায় এসব উদ্যোগ আজ চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

ব্যক্তিগত বিপর্যয়: চাকরি হারানোর কষ্ট

চাকরি হারানো অনেক পেশাজীবীর জন্য এ সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, একেবারে জীবনের বাস্তবতায় আঘাত হেনেছে। ঢাকাভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর কর্মকর্তা আদিব খান (ছদ্মনাম) জানান, “একদিনেই চাকরি হারালাম। পাঁচ মাস পর একই প্রতিষ্ঠানে নিম্নপদে ফিরে এসেছি। পরিবারকে ময়মনসিংহে পাঠাতে হয়েছে—আমি এখন কক্সবাজারে এক প্রকল্পে আছি।”

একইভাবে, একক মা সামিয়া আলম, যিনি একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে যোগাযোগ বিভাগের প্রধান ছিলেন, বলেন, “এক রাতে জানলাম প্রকল্প বন্ধ। মনে হলো মাথার ওপর আকাশটাই ভেঙে পড়ল। এখনো নতুন চাকরি পাইনি, মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।”

অনলাইন সহায়তা ফোরাম: নতুন বাস্তবতার খোঁজে

চাকরি হারানো হাজারো উন্নয়নকর্মীর সহায়তায় একটি অনলাইন ফোরাম গড়ে উঠেছে। অ্যাসোসিয়েশন অব আনএমপ্লয়েড ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনালস (AUDP)-এর আহ্বায়ক জিনাত আরা আফরোজ জানান, “ইউএসএইড বন্ধের পর অনেক বড় দাতা সংস্থাও পিছু হটেছে। আমরা বেকার উন্নয়নকর্মীদের জন্য চাকরির খবর, নেটওয়ার্কিং ও মানসিক সহায়তার ফোরাম চালু করেছি।”

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশু

রিলিফওয়েবের তথ্যমতে, ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে নারী ও শিশু বিষয়ক প্রকল্পগুলোর ওপর। শিশু সুরক্ষার তহবিল ৩৬% হ্রাস পেয়েছে এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রমে অর্থায়ন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ ও সামাজিক শোষণের ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

“সরকারকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে”

কেয়ার বাংলাদেশ-এর সাবেক পরিচালক টনি মিশেল গোমেজ বলেন, “৫০ হাজার মানুষ বেকার, তাদের পরিবার অনিশ্চয়তায়। সরকার যদি দ্রুত তহবিল বরাদ্দ না দেয়, উন্নয়ন খাত পুনরুদ্ধার অসম্ভব হবে।” তিনি আরও বলেন, “উচ্চপদস্থ পেশাজীবীদের জন্য নতুন চাকরি পাওয়া আরও কঠিন হয়ে গেছে। বছরের পর বছরের অভিজ্ঞতা আজ মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।”

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

বর্তমানে অনেক উন্নয়নকর্মী বাধ্য হয়ে ছোট ব্যবসা শুরু করছেন বা ফ্রিল্যান্স পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু কেউই জানেন না এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ সংকট নারী ও শিশু সুরক্ষা, দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের গত এক দশকের অর্জনগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

টনি মিশেল গোমেজ সতর্ক করে বলেন, “যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে সমতা ও ন্যায্য সমাজ গঠনের ভিত্তিটাই ভেঙে পড়বে।”


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5787 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 04:11:13 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh