• হোম > অর্থনীতি | এক্সক্লুসিভ > খাদ্যই জীবন, খাদ্যই আশা — টেকসই ভবিষ্যতের পথে সবুজ রূপান্তরের অভিযাত্রা

খাদ্যই জীবন, খাদ্যই আশা — টেকসই ভবিষ্যতের পথে সবুজ রূপান্তরের অভিযাত্রা

  • মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৩৫
  • ৫৩

---

ই-বাংলাদেশ ডেস্ক

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের ভাষায়, “খাদ্য হলো জীবন—এবং খাদ্যই আশা। খাদ্যব্যবস্থায় পরিবর্তন শুধু সম্ভব নয়, এটি অপরিহার্য। মানুষের জন্য, আমাদের গ্রহের জন্য, সমৃদ্ধির জন্য।”

এই দর্শনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ডিজিটাল কৃষি প্ল্যাটফর্ম e-Farmer’s greenQubeEFARMER নতুন এক সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছে।

সংকটের মুখে বৈশ্বিক খাদ্যব্যবস্থা

বিশ্ব আজ এক নতুন খাদ্য সংকটের মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা, বৈশ্বিক সংঘাত এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অভূতপূর্ব অচলাবস্থা। পুষ্টিকর খাবারের দাম আকাশছোঁয়া, অন্যদিকে কোটি কোটি মানুষ এখনও অপুষ্টি ও ক্ষুধার শিকার।

এই পরিস্থিতিতে একটি কার্যকর খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন শুধু কৃষির বিষয় নয়—এটি হয়ে উঠেছে মানবিক, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মেরুদণ্ড। খাদ্য উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সংযুক্ত রয়েছে অসংখ্য অংশীদার—কৃষক, প্রক্রিয়াজাতকারী, খুচরা বিক্রেতা, ভোক্তা এবং নীতিনির্ধারক। তাদের সবাইকে একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক সিস্টেমের অংশ হিসেবে দেখার সময় এসেছে।

একীভূত খাদ্যব্যবস্থা: সমাধানের নতুন মডেল

একটি সফল ও টেকসই খাদ্যব্যবস্থা তৈরিতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকবে, প্রাণীসম্পদ, পানি ও মাটির ভারসাম্য রক্ষা করা হবে এবং কৃষিকে রাখা হবে ব্যবসা ও উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দুতে। একই সঙ্গে পরিবেশ ও অর্থনীতি—দুটোকেই সুরক্ষিত রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এই লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন চিন্তাভাবনা। আর বাংলাদেশে সেই পথের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করছে e-Farmer’s greenQubeEFARMER।

greenQubeEFARMER: ডিজিটাল থেকে গ্রিন ইনোভেটর

e-Farmer’s greenQubeEFARMER প্ল্যাটফর্মটি শুধু একটি ডিজিটাল টুল নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট কৃষি ইকোসিস্টেম। এখানে কৃষকরা ডিজিটাল প্রযুক্তি, তথ্য ও বাজার সংযোগের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আয় বাড়াতে পারেন। প্ল্যাটফর্মটির মূল লক্ষ্য হলো—কৃষককে রূপান্তরিত করা ডিজিটাল কৃষক থেকে সবুজ উদ্ভাবক হিসেবে।

greenQubeEFARMER-এর কার্যক্রম:

স্মার্ট ফার্মিং ও জলবায়ু-স্মার্ট সমাধান: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। খরা, বন্যা বা লবণাক্ততা—যেকোনো পরিস্থিতিতে কৃষককে টিকিয়ে রাখার জন্য তৈরি হচ্ছে বিশেষায়িত সমাধান।

টেকসই চাষাবাদ ও জৈব কৃষি: রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে, তেমনি কৃষকের উৎপাদন খরচও কমছে।

তরুণ ও নারী কৃষকদের ক্ষমতায়ন: কৃষিকে আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে তরুণদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি, গ্রামীণ নারীদের কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

ডিজিটাল খাদ্যশৃঙ্খল: কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরাসরি সংযোগ তৈরি করে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো এবং কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ: পরিবর্তনের পথে এক নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশ আজ কৃষিতে আত্মনির্ভর। কিন্তু টেকসই খাদ্যব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ এখনও বিশাল। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি, বাজারের অস্থিরতা এবং কৃষিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব—সব মিলিয়ে প্রয়োজন নতুন ভাবনা ও প্রযুক্তির সমন্বয়।

বাংলাদেশের জন্য জরুরি পাঁচটি পদক্ষেপ:

১. জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার—যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম।

২. ডিজিটাল কৃষি প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণ—greenQubeEFARMER-এর মতো প্ল্যাটফর্মকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া।

৩. পুষ্টিকর ও স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনে জোর—বৈচিত্র্যময় ফসল চাষে উৎসাহ দেওয়া এবং স্থানীয় খাদ্যাভ্যাস সংরক্ষণ করা।

৪. নারী ও যুব কৃষক ক্ষমতায়ন—কৃষিকে একটি আধুনিক, লাভজনক ও সম্মানজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

৫. সবুজ বিনিয়োগ ও ইকো-ফার্ম নেটওয়ার্ক তৈরি —পরিবেশবান্ধব কৃষি উদ্যোগে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং কৃষকদের সংগঠিত করা।

এশিয়ার খাদ্য-উদ্ভাবনের নতুন কেন্দ্র: বাংলাদেশ

e-Farmer দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ হতে পারে এশিয়ার খাদ্য-উদ্ভাবনের নতুন কেন্দ্র। শর্ত একটাই—কৃষিতে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও সহযোগিতাকে একসাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কৃষকদের হাতে তুলে দিতে হবে সঠিক তথ্য, প্রযুক্তি ও বাজার সংযোগ।

দেশের লাখ লাখ কৃষক যদি স্মার্ট ফার্মিং টুল, জলবায়ু পূর্বাভাস, মাটি পরীক্ষা, বাজার মূল্য তথ্য এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা পান, তাহলে কৃষি হয়ে উঠবে আরও লাভজনক, টেকসই এবং আধুনিক।

খাদ্যের ভবিষ্যৎই আমাদের ভবিষ্যৎ

খাদ্য কেবল টিকে থাকার উপায় নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার ভিত্তি। আজকের বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও সহযোগিতাই গড়ে তুলবে আগামীকালের টেকসই পৃথিবী। প্রতিটি শস্যদানা, প্রতিটি কৃষক এবং প্রতিটি সবুজ উদ্যোগ—সবই গুরুত্বপূর্ণ এই রূপান্তরের পথে।

greenQubeEFARMER শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি আন্দোলন। একটি সবুজ বিপ্লব, যা কৃষিকে করছে স্মার্ট, সবুজ ও টেকসই। এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান সবার প্রতি—কৃষক, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ, নীতিনির্ধারক এবং সচেতন নাগরিক—সবাইকে।

কারণ খাদ্যের ভবিষ্যৎই আমাদের ভবিষ্যৎ। এবং সেই ভবিষ্যৎ হবে সবুজ, স্মার্ট ও সমৃদ্ধ।

greenQubeEFARMER — কৃষিকে করছে স্মার্ট, সবুজ ও টেকসই।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5780 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 04:27:48 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh