হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে ইমপোর্ট কুরিয়ার সেকশন থেকে—প্রাথমিকভাবে এমন ধারণা করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিষয়টি নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন,
“আগুনের সূত্রপাত ইমপোর্ট কুরিয়ার সেকশন থেকে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমরা এখনই নিশ্চিত হতে পারছি না। বিভিন্ন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
২২ ঘণ্টার লড়াইয়ে নিয়ন্ত্রণে আগুন
এর আগে শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে কার্গো ভিলেজের আমদানি বিভাগে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩৭টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি টানা ২২ ঘণ্টা লড়াই করে।
রাতভর চলা এই অভিযান শেষে রবিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাস্থলে ধোঁয়া ও দাহ্য পদার্থের তীব্র গন্ধের কারণে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া ফায়ারকর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
কোটি টাকার ক্ষতি, পোশাক খাতে প্রভাব
বেবিচক ও শুল্ক বিভাগের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, আগুনে কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্য সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এর মধ্যে ছিল রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কুরিয়ার ডকুমেন্ট ও বিদেশি যন্ত্রাংশ।
এ ঘটনায় দেশের তৈরি পোশাক খাতেও প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, অনেক ক্রেতার অর্ডারের ডেলিভারি বিলম্বিত হবে, যা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ও সময়সীমা উভয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) এক কর্মকর্তা বলেন,
“এই ধরনের দুর্ঘটনা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, আমাদের ব্র্যান্ড ইমেজেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিরাপত্তা ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এখন জরুরি।”
তদন্তে একাধিক সংস্থা কাজ করছে
ফায়ার সার্ভিস, সিভিল এভিয়েশন, সিআইডি, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও শুল্ক বিভাগ যৌথভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগুনের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্ত করতে তারা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।
একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জানান,
“ঘটনাস্থলে বেশ কিছু দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা কেমিক্যাল বিক্রিয়া—দুই সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুনর্গঠনের পথে বিমানবন্দর
বেবিচকের চেয়ারম্যান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে দ্রুত। সাময়িকভাবে বিকল্প গুদাম ব্যবহারের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম চালু রাখা হবে, যাতে বাণিজ্যিক প্রবাহ ব্যাহত না হয়।
“আমরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন করে অডিট চালাব। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” — যোগ করেন বেবিচক চেয়ারম্যান।