অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের দক্ষতা, জবাবদিহি ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে নতুন কর্মসম্পাদন মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছে সরকার। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) ব্যবস্থার পরিবর্তে এখন থেকে চালু হচ্ছে সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস)।
গত রোববার (১৯ অক্টোবর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ–সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৪–১৫ অর্থবছর থেকে প্রচলিত এপিএ পদ্ধতির পরিবর্তে এই জিপিএমএস ব্যবস্থা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য—সংস্কার ও জনসেবার অগ্রাধিকার বিবেচনায় প্রশাসনিক কাজকে আরও বাস্তবভিত্তিক, সহজীকৃত ও গতিশীল করা।
নতুন এই পদ্ধতির আওতায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীন সংস্থাকে তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সেই পরিকল্পনার আলোকে প্রতি অর্থবছরে আলাদা বার্ষিক কর্মসম্পাদন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে এবং বছরের শেষে প্রতিটি দপ্তরকে কৌশলগত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
অর্থবছর শেষে এসব পরিকল্পনার সার্বিক মূল্যায়ন করা হবে উপদেষ্টা পরিষদ বা মন্ত্রিসভা কমিটির মাধ্যমে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, কাজের ধরন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাতটি গুচ্ছ বা ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে, যাতে কার্যক্রম মূল্যায়ন আরও সুনির্দিষ্ট হয়। নতুন কাঠামোর মাধ্যমে প্রতিটি মন্ত্রণালয় সরকারের উন্নয়ন অগ্রাধিকার, কর্মবণ্টন কাঠামো এবং বাজেট কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজের পরিকল্পনা তৈরি করবে।
এতে চারটি কর্মসম্পাদন ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে—প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, সেবার মান, উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা। প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য আলাদা লক্ষ্য, সূচক ও ফলাফল নির্ধারণ করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগ সরকারের সেবাখাতে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। আগে যেখানে এপিএ অনেকাংশে কাগজে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে জিপিএমএস বাস্তব সময়ের তথ্যভিত্তিক মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি করবে।
সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে দপ্তরগুলোর মধ্যে কর্মদক্ষতার প্রতিযোগিতা তৈরি হবে, যা শেষ পর্যন্ত জনগণকে উন্নত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।