• হোম > ফিচার > রাজনীতির একাল সেকাল

রাজনীতির একাল সেকাল

  • শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ২১:৩৭
  • ১৩৫৪

ক্যাসিনো

গত সেপ্টেম্বরে দেশের মানুষ অবাক হয়ে দেখে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বেরিয়ে আসা রাজনীতির আড়ালে অবৈধ ব্যবসার সীমাহীন কদর্য রূপ৷ সেই অভিযান এখনো চলছে৷ কিন্তু এরমধ্যে পাঁচতারা হোটেলকেন্দ্রিক আরেক ব্যবসার খবর দেশের মানুষকে আবারো বিস্মিত করলো৷

রাজনীতির আড়ালে যারা এই কোটি কোটি টাকার ব্যবসায় জড়িত, তারা আসলে কারা, তারা কি আদো কোনো দলের আদর্শ লালন করে? না কি দলের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে অন্যদলের অন্যদলেরব গুপ্তচর দলের পিছনে ছুরিগকাঘাত করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠনের নেতা-কর্মী নাকি তারা। খালেদ, সম্রাট, জিকে শামীম, পাপিয়া- এই নামগুলো এখন সবার মুখে মুখে৷ তারা কেউ যুবলীগ, কেউ যুব মহিলা লীগ আবার কেউবা স্বেচ্ছাসেবক লীগের৷

ক্যাসিনোকাণ্ডে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের সবার সঙ্গে একটি নাম বারবার উচ্চারিত হয়েছে, তিনি হলেন আওয়মী যুবলীগের তখনকার চেয়ারম্যান ওমর ফরুক চৌধুরী৷ তাকে যুবলীগ থেকে বিদায় করা হয়েছে৷ গণভবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷

আর ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তখকার ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ক্যাসিনো থেকে আয়ের কোটি কোটি টাকা কোথায়? সম্রাটের নাকি এখন তেমন কোনো টাকা-পয়সার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷

সম্রাটের বিরুদ্ধে রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে এবং তার সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় ও রমনায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করেছে র‌্যাব৷

জি কে শামীমের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলা হয়েছে৷ আর খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও অর্থ পাচার আইনে তিনটি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷

তদন্ত ও বিচার যেমন চলছে

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে আটকদের কাছ থেকে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে৷ জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, বিদেশি মদ ও অন্যান্য মাদক৷ খালেদ ও সম্রাটের অফিস থেকে জব্দ করা হয়েছে নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের লাঠি ও ইলেকট্রিক শক দেয়ার মেশিন৷

দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ ৮ কোটি ৪৫ লাখ নগদ টাকাও জব্দ করা হয়েছে৷ উদ্ধার হয়েছে ১৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩২টি চেক বই এবং ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক৷ জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৮ কেজি ওজনের অলঙ্কার, যার আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা৷

তবে দুই ভাই এনামুল ও রূপনের বাসা থেকে সর্বশেষ ২৫ জানুয়ারি নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬শ’ টাকা উদ্ধারের ঘটনা ওই হিসাবের বাইরে৷

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে একশ’রও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ সব মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৩০টিরও বেশি৷

তারমধ্যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে পাঁচটি মামলায়৷ সম্রাটের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলায় বিচার শুরু হয়েছে৷ খালেদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে অর্থ পাচার আইনের মামলায়৷ জিকে শামীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় বিচার চলছে৷

দুর্নীতি দমন কমিশনও ক্যাসিনোকাণ্ডে মামলা করেছে ২২ জনের বিরুদ্ধে৷ অনুসন্ধান চলছে৷ দুদক এ পর্যন্ত জিকে শামীমের ২৪৭ কোটি টাকা, খালেদের ৭৫ কোটি টাকা এবং লোকমানের ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে৷ তবে সম্রাটের দেশে কোনো অর্থের খোঁজ এখনো তারা পায়নি৷

পাপিয়া সমাচার

যুব মহিলালীগের নেতা শামিমা নূর পাপিয়া, তার স্বামী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনসহ চারজনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে ২২ ফেব্রুয়ারি৷ র‌্যাব জানায়, পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দু’টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়৷

র‌্যাবের দাবি, পাপিয়ার ঢাকায় দু’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দু’টি ফ্ল্যাট, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং গাড়ি ব্যবসায় প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ আছে বলেও দাবি করা হয়েছে৷তবে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলায় র‌্যাবের দাবি করা সম্পদের উল্লেখ নেই৷ আর ওয়েস্টিন হোটেলে পাপিয়ার আস্তানা এবং নারীদের জোর যৌন ব্যবসায় বাধ্য করার ব্যাপারেও কোনো তথ্য নেই৷ কিন্ত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব বলেছিল, ‘‘পাপিয়া মাসে শুধুমাত্র হোটেল ওয়েস্টিনে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেছেন৷ অথচ তার বছরে আয় দেখানো আছে ১৯ লাখ টাকা৷ ওয়েস্টিন হোটেলে প্রতিদিন শুধুমাত্র বারের খরচ বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতেন পাপিয়া৷ ওয়েস্টিনে তার নিয়ন্ত্রণে সাত জন নারী কাজ করতেন৷ তাদেরকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন পাপিয়া৷ হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট পাপিয়ার নামে সবসময় ‘বুকড’ থাকতো৷ পাপিয়া জোর করে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন৷”

গল্পের সাথে মামলার ফারাক কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এক ধরনের চমক সৃষ্টি করতে চায়৷ চমক তৈরির একটা প্রবণতা থাকে৷ কিন্তু বিস্তারিত হোমওয়ার্ক থাকে না৷ সেটা মাদকবিরোধী অভিযান হোক আর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান হোক আর পাপিয়াবিরোধী অভিযান হোক৷ এর নেপথ্যে তো অনেকে থাকে, তাদের তো আর ধরা হয় না৷ ফলে চমক সৃষ্টি পর্যন্তই শেষ হয়৷” আর এই চমকের মধ্য দিয়ে অনেক কিছু আড়াল করা হয় বলেও মনে করেন তিনি৷

রাজনীতিতে কেন ক্যাসিনো, ওয়েস্টিন

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম মনে করেন, ‘‘রাজনীতি এখন অর্থকেন্দ্রিক হয়ে গেছে৷ ফলে যারা রাজনীতিতে আসেন, তারা মনে করেন, টাকা না হলে টিকে থাকা যাবে না৷ তাই তারা রাজনীতিকে ব্যবহার করেন টাকা আয়ের উপায় হিসেবে, সেটা বৈধ আর অবৈধ যেভাবেই হোক৷” শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির বড়রা যেমন জড়িত, তেমনি পুলিশ বা প্রশাসনের লোকও জড়িত৷ প্রকাশ হয় তখনই, যখন আর সামলানো যায় না৷”

তার মতে, শুধু পাপিয়া, সম্রাট আর জিকে শামীমকে ধরলে তো হবে না৷ এরকম আরো অনেক পাপিয়া, সম্রাট আর জিকে শামীম আছে রাজনীতিতে৷ যদি প্রক্রিয়া বন্ধ না করা যায়, তাহলে আরো জন্ম নেবে৷

সূত্র ড্যেচ ভেলে


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/573 ,   Print Date & Time: Saturday, 7 June 2025, 11:11:04 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh