যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় নৈঃশব্দ্যে কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতি — যদিও সেখানে সম্প্রতি প্রাণঘাতী কোনো হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার (নতুন পর্যবেক্ষকদের প্রশ্নে) এ তথ্য জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, তার মধ্যস্থতায় হওয়া এই যুদ্ধবিরতিটি বজায় থাকবে এবং তা শান্তিপূর্ণভাবে চলবে।
এয়ারফোর্স ওয়ানের বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন,
“হ্যাঁ, যুদ্ধবিরতিটি এখনও আছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে এটি শান্তিপূর্ণভাবে টিকে থাকবে।”
ট্রাম্প বলেন, গতকালের হামলা ছিল হামাসের অবস্থানে লক্ষ্যবস্তু করে চালানো—ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী তারা ‘হামাসের অবস্থান’কে টার্গেট করেছে। তিনি একই সঙ্গে ইঙ্গিত দেন, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের ঘটনায় শিরোধার্য নেতৃত্বের বদলে কোনো ‘কিছু বিদ্রোহী’ জড়িত থাকতে পারে।
অন্যদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, গাজায় সহিংসতার সাম্প্রতিক উত্থান-পতনকে তিনি “ভীষণ বড় কোনো ঘটনা” হিসেবে মনে করছেন না এবং মন্তব্য করেন, যুদ্ধবিরতিতে স্বাভাবিকভাবেই ‘উত্থান-পতন’ থাকতে পারে। তাঁর ভাষায়,
“এটি টেকসই শান্তি গঠনের সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরি করেছে; তারপরও উত্থান-পতন থাকবে, আমাদের পরিস্থিতি নজরে রাখতে হবে।”
নিরাপত্তা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উত্তপ্ত ছিল: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় স্থানীয় উদ্ধারকারী সংস্থা সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে—এক হামলায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হতাহতের তথ্য যাচাই করছে বলেও তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল বন্দী ও জিম্মি বিনিময়ের রূপরেখা এবং গাজা পুনর্গঠনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রস্তাব। তবে রূপরেখা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই নানা চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে—বিশেষত বন্দী বিনিময়, হামাসকে নিষ্ক্রিয়করণ এবং গাজা পুনর্গঠনের নিরাপত্তা কাঠামো সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে।
মার্কিন দিকও পরিষ্কার করেছে যে, হামাসকে নিরস্ত্র করার জন্য পারস্য উপসাগরীয় কয়েকটি আরব দেশকে একটি নিরাপত্তা কাঠামো গঠনে অংশগ্রহণ করতে হবে—কিন্তু এখনো সেই কাঠামো গঠিত হয়নি বলেই ভ্যান্স ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ট্রাম্পের মন্তব্য ও ওতপ্রোতভাবে ইঙ্গিতিত আশাবাদ—যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে—আবারও গাজার মানুষের জন্য অনিশ্চয়তারই একটি প্রতিচ্ছবি। গত দুই বছরে গাজা-ঘটে সংঘর্ষ ও পাল্টা হামলার ফলশ্রুতিতে গ্র্যান্ড স্কেলে ভোগান্তি ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে: ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া যুদ্ধে দুই বছরের মধ্যে প্রচণ্ড হানাহানি ও বিপুল কষ্টের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেও পুনরায় সহিংসতার ঝুঁকি থেকেই যায়। রিপোর্টগুলোতে উল্লেখ আছে—এই সিরিয়ালে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, হাজারো ঘরবাড়ি ধ্বংস ও বহু প্রাণহানির খবর।
ধারাবাহিক সহিংসতা ও প্রতিক্রিয়ার ধরাচিত্রে একটি বড় উদ্বেগ হলো—ছোট-ছোট ‘উত্থান-পতন’ একদিনে বড় ব্যোমকোণিকক ঘটনার ভূমি গড়ে তুলতে পারে; তাছাড়া বন্দী-রিলিজ, পুনর্গঠন এবং নিরাপত্তা গঠনের প্রক্রিয়া যতদ্রুত যথাযথভাবে না নেওয়া হবে, ততদিনই জনজীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকবে।
মানবিক দিকটি স্পষ্ট: গাজার সাধারণ মানুষ—নারী, শিশু, বৃদ্ধ—প্রতিটি সহিংসতা ও অব্যবস্থার সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বারবার অনুরোধ করেছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ত্রাণ সরবরাহ অবাধ করার, অভিযানগুলোতে বেসামরিক প্রাণহানির তদন্তের ও দায়ীদের আইনের আলোয় আনার জন্য।
ট্রাম্প ও ভ্যান্স উভয়ের মন্তব্যই একান্ত কূটনৈতিক টোন ধারণ করে। তারা যুদ্ধবিরতি রক্ষার প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করলেও মাঠের বাস্তবতা—ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও হতাহতের খবর—এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেয়। বন্যা-পর্যায়ের মত দ্রুতবিধ্বস্ত রাজনীতিক-সামরিক পরিস্থিতিতে শান্তি ধরে রাখতে হলে আন্তর্জাতিক চাপ, স্থানীয় পক্ষগুলোর মধ্যে সতর্ক সমন্বয় ও তাত্ক্ষণিক মানবিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।
শেষ কথায়—ট্রাম্পের মধ্যস্থতা যুদ্ধবিরতি ধরে রাখার সুযোগ করে দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন; কিন্তু গতকালের মতো প্রানঘাতী আঘাতই প্রমাণ করে, টিকিয়ে রাখতে হলে কেবল কূটনীতিই নয় বাস্তব নিরাপত্তা-ব্যবস্থা ও দায়িত্বশীলতার কাঁটা বসাতে হবে। গাজার বেসামরিক মানুষের জীবন, পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ—এসব প্রশ্নের জবাবে মাঠে প্রতিশ্রুতির বাস্তব কার্যকরতা প্রয়োজন।