পশ্চিম তীরের রক্তভেজা মাটিতে আবারও ঝরল ফিলিস্তিনিদের রক্ত। ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় কমপক্ষে ১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। শুক্রবারের এই হামলা ঘটে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায়, যেখানে বহু বছর ধরে চলছে দখল, নিপীড়ন আর প্রতিরোধের এক অনন্ত চক্র।
আনাদোলু সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে রয়েছেন কিশোর, যুবক ও বেসামরিক মানুষ— যাদের অপরাধ কেবল ফিলিস্তিনি হওয়া।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এক বিবৃতিতে জানায়, জেরুজালেমের উত্তরে কাফর আকাব শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে দুই ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
বিবৃতিতে বলা হয়,
“আমাদের টিম দুইজন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়েছে— একজন হাঁটুর নিচে এবং অপরজন ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর, যার পায়ে গুলি লেগেছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফাকে বলেন, ইসরায়েলি সেনারা হঠাৎ করেই শহরটিতে অভিযান চালায়। তারা স্থানীয় যুবকদের ধাওয়া করে গুলি ও স্টান গ্রেনেড ছোড়ে, আতঙ্কে শহরের মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ে।
অভিযানের সময় শহরের প্রধান সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্সগুলোও বাধার মুখে পড়ে, ফলে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই, জেনিনের দক্ষিণে কাবাতিয়া শহরে এক ফিলিস্তিনি পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
এরও আগে বৃহস্পতিবার হেবরনের দক্ষিণে আর-রিহিয়া গ্রামে, ফুটবল খেলতে থাকা এক ফিলিস্তিনি শিশুকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
শিশুটির নাম প্রকাশ করেননি চিকিৎসকরা, তবে স্থানীয়রা বলেন—
“ওর বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। খেলার মাঠে গুলি লেগে ওর জীবন শেষ হয়ে গেল।”
ফিলিস্তিনি মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। বাড়ি-ঘর ধ্বংস, কৃষিজমি দখল, এবং নির্বিচারে গুলি— এখন ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন বাস্তবতা।
জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ২০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই শিশু ও কিশোর।
ফিলিস্তিনি বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল একটি সামরিক অভিযান নয়— এটি এক জাতির অস্তিত্ববিরোধী দমননীতি, যার লক্ষ্য “ফিলিস্তিনের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা।”
তবে আহতদের স্বজনরা এখনও আশাবাদী— “যত গুলি আসুক, আমরা টিকে থাকব। কারণ এই মাটি আমাদের।”