• হোম > বাংলাদেশ > ঐতিহাসিক জুলাই সনদে নতুন সূচনা

ঐতিহাসিক জুলাই সনদে নতুন সূচনা

  • শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১৭
  • ৫৫

---

ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সাক্ষী হলো জাতি।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হলো “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”–এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা একযোগে এই সনদে স্বাক্ষর করেন।

এই সনদকে অনেকে বলছেন — “বাংলাদেশের নতুন গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের দলিল।”


নতুন যাত্রার প্রতীক

বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
তার কিছুক্ষণ পরই মঞ্চে আসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

জাতীয় সংগীত শেষে অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে ওঠেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।

বিদেশি কূটনীতিকদেরও উপস্থিতি ছিল অনুষ্ঠানস্থলে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাপানের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের এই নতুন রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সাক্ষী হন।


গণতন্ত্র ও ঐক্যের অঙ্গীকার

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সনদে স্বাক্ষরের পর বলেন,

“এই সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নয়, এটি ১৮ কোটি মানুষের জন্য। আমাদের লক্ষ্য হলো—দলীয় বিভাজন নয়, মানবিক ঐক্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার।”

তিনি আরও যোগ করেন,

“আজ আমরা এমন একটি পথে যাত্রা শুরু করলাম, যেখানে ক্ষমতার নয়, দায়িত্বের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা পাবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারাও সমস্বরে বলেন,

“গণতন্ত্রের পুনর্গঠনই এখন জাতির সবচেয়ে বড় কর্তব্য।”


ভিন্নমতের প্রতি সম্মান

অনুষ্ঠানে উপস্থিত পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,

“এখানে কিছু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, তবে ভিন্নমত গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আজকের এই সনদ তা ধারণ করছে।”

বাম ধারার কিছু দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—যদিও সনদে তাৎক্ষণিক স্বাক্ষর করেনি, তারা জানিয়েছে,

“সংশোধিত খসড়া হাতে পেলে শিগগিরই যুক্ত হবে।”

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, আইনি কাঠামো স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না।
এই ভিন্নমতের মাঝেও অনুষ্ঠানস্থলে ছিল এক ধরনের ঐক্যের আবহ—যেন সবাই এক স্বপ্নে একত্রিত।


নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি

অনুষ্ঠান উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবক দল একযোগে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে।
বিকেল তিনটার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে শুরু করে সংসদ ভবন চত্বর পর্যন্ত পুরো এলাকা কর্ডন করে ফেলা হয়।

দিনের প্রথমার্ধে কিছু বিক্ষোভ ও টানাপোড়েন দেখা গেলেও সন্ধ্যার সময় পুরো অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।


প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেও উদ্দীপনা

বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠান কিছুটা বিলম্বিত হয়।
তবুও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক নাগরিক সমাজ প্রতিনিধি, তরুণ কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
বৃষ্টির পরও তারা স্থান ত্যাগ করেননি—বরং মোমবাতি হাতে স্লোগান দেন,
“গণতন্ত্রের আলো জ্বালো, জুলাই সনদ সফল হোক।”

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন,

“আজকের দিনটি কেবল রাজনীতির নয়, এটি ইতিহাসের দিন। প্রতিকূল আবহাওয়া থামাতে পারেনি বাংলাদেশের নতুন সূচনা।”


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে বলেন,

“আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বড় মাইলফলক। আমরা চাই, এই সনদ বাস্তব রূপ পাক।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত জানান,

“এই সনদ যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি মডেল গণতান্ত্রিক উদ্যোগ।”


মানবিক বাস্তবতায় সনদের তাৎপর্য

জুলাই জাতীয় সনদ শুধু একটি রাজনৈতিক দলিল নয়—এটি মানুষের অধিকারের প্রতিশ্রুতি।
এতে প্রতিফলিত হয়েছে—

  • ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা,

  • দুর্নীতি ও সহিংসতা নির্মূল,

  • নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ,

  • শিক্ষায় ও কর্মসংস্থানে সবার প্রবেশাধিকার।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য হ্রাসে উদ্যোগ নেওয়ার অঙ্গীকারও এই সনদের অংশ।
এ কারণে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের “মানবিক রাজনীতির নতুন অধ্যায়”।


সমাপ্তি

সন্ধ্যা নামার সময় যখন সনদে শেষ স্বাক্ষরটি পড়ছিল, তখন দক্ষিণ প্লাজার বাতাসে মিশে ছিল এক অন্যরকম আবেগ।
অতীতের সংঘাত, বিভাজন ও অনিশ্চয়তার ওপরে উঠে
বাংলাদেশ যেন নতুন করে প্রতিজ্ঞা করল—
“মানুষই হবে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।”


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5636 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:18:19 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh