• হোম > রাজনীতি > সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে জামায়াতের দাবি আত্মঘাতী হতে পারে

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে জামায়াতের দাবি আত্মঘাতী হতে পারে

  • শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০
  • ৫৬

---

বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান সতর্ক করে বলেছেন— “সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু একে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হলে সেটা হবে আত্মঘাতী।”

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী যদি এই পথে এগোয়, তাহলে তারা আবারও একটি ঐতিহাসিক ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে। “এই ভুল দেশের যেমন ক্ষতি করবে, তেমনই তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও বিপন্ন করবে,”—নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘জাহেদস টেইক’-এ এমন মন্তব্য করেন তিনি।

সম্প্রতি জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুর দাবি তুলেছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার কৌশলও হতে পারে।

জাহেদ উর রহমান বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকেই পিআর পদ্ধতি নিয়ে নানা বিতর্ক শুরু হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব দেন, এটি শুধু সংসদের উচ্চকক্ষে (আপার হাউস) সীমিত থাকা উচিত। কারণ বর্তমান একক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে এই পদ্ধতি চালু হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।”

তার মতে, জামায়াত এখন এই দাবিকে রাজনৈতিক চাপের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে—বিএনপি ও অন্যান্য শক্তির ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য। তিনি বলেন, “যদি এটা কেবল রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল হয়, তাহলে কিছুটা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু যদি উদ্দেশ্য হয় নির্বাচন ব্যাহত করা, তাহলে সেটা জাতির জন্য ভয়াবহ।”

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, জামায়াতের ইতিহাসে একাধিকবার এমন ভুল সিদ্ধান্ত দেখা গেছে—

“১৯৪৭ সালে ভারতপন্থী অবস্থান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতা, ১৯৮৬ সালে সামরিক শাসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ—এসবই ছিল জনমতের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার উদাহরণ। এখন আবার তারা এমন একটি দাবি করছে, যা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক।”

জাহেদ উর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান ‘ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট’ নির্বাচন ব্যবস্থা যদিও কিছু সীমাবদ্ধতা তৈরি করে, তবুও এটি একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনে সহায়ক। বিপরীতে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশনে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে—ফলে জোটের ওপর নির্ভরতা বাড়ে এবং প্রশাসনিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও যোগ করেন, “জামায়াত জানে সরাসরি নির্বাচনে তারা বড় সাফল্য পাবে না। কিন্তু যদি পিআর পদ্ধতি চালু হয়, ১০ শতাংশ ভোট পেলেই ৩০টি আসন পেতে পারে। তাই তারা এটি রাষ্ট্রীয় স্বার্থে নয়, দলীয় স্বার্থে চায়।”

তার মতে, জামায়াত মনে করছে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের প্রশাসনিক প্রভাব কমে যাবে। তাই তারা হয়তো নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত বা ব্যাহত করে বর্তমান সুবিধাজনক অবস্থান বজায় রাখতে চাইছে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এক নতুন রূপান্তরের পথে। এই সময় যে কোনো কৌশলগত ভুল শুধু একটি দলের নয়, গোটা জাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5622 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:59:54 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh