• হোম > চট্টগ্রাম | দেশজুড়ে > ১৭ ঘণ্টা পর সিইপিজেডে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে

১৭ ঘণ্টা পর সিইপিজেডে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে

  • শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৭
  • ৫২

---

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগার প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ২৬টি ইউনিটের টানা রাতভর যৌথ প্রচেষ্টায় শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও কয়েক ঘণ্টা লাগবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।


ভোরে নিয়ন্ত্রণে, তবে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে

ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট এখনো ভবনের ভেতরে ধোঁয়া ও ছিটেফোঁটা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবনের বিভিন্ন স্থানে জ্বলতে থাকা দাহ্য পদার্থগুলোর কারণে পুরোপুরি নির্বাপণে সময় লাগছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন,

“দীর্ঘ রাতের প্রচেষ্টায় অবশেষে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন আমরা ভবনের ভেতরে আগুনের সম্ভাব্য উৎস ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করছি।”

তিনি আরও জানান, আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে ভবনটির বড় অংশ ধসে পড়েছে।


যেভাবে শুরু হয় অগ্নিকাণ্ড

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত এই আটতলা কারখানার অষ্টম তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন নিচের তলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথমে স্থানীয় ইউনিটগুলো আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্টেশন থেকে একে একে ২৬টি ইউনিট যোগ দেয়।

কারখানাটিতে চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত পোশাক ও সরঞ্জাম তৈরির জন্য প্রচুর দাহ্য রাসায়নিক ও ফেব্রিকস মজুদ ছিল। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অভূতপূর্ব সময় ও শ্রম দিতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।


সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বিত তৎপরতা

আগুনের মাত্রা বুঝতে পেরে সিইপিজেডে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর একটি টিম প্রথমেই ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করতে যায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নৌবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট এবং রাতেই বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট যোগ দেয়।
এই তিন বাহিনীর সমন্বিত পদক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।


রাতভর আতঙ্ক, ভোরে স্বস্তি

সন্ধ্যার পর আগুন পুরো ভবনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ উত্তাপে আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার পরিবেশ অসহনীয় হয়ে ওঠে।
আগুনের তীব্রতায় ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা ভবন ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। শেষ পর্যন্ত ভবনের অষ্টম তলার একটি অংশ ধসে পড়ে। তবে আগুন আশপাশের অন্য ভবনে ছড়িয়ে পড়েনি।


পুড়ে ছাই হলো শিল্পের স্বপ্ন

‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’—চিকিৎসা ও রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী এই কারখানাটি গত এক দশক ধরে শত শত শ্রমিকের জীবিকার উৎস ছিল। আগুনে ভবনটির প্রায় সব অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
স্থানীয় শ্রমিকরা চোখে জল নিয়ে বলেন,

“এই কারখানায় শুধু মেশিন না, আমাদের ভবিষ্যৎও পুড়ে গেছে।”

ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।


ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশ কোটি টাকা

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা দিয়েছে শিল্পাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। আগুনে বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা পোশাক, প্যাকেজিং উপকরণ ও কাঁচামাল পুড়ে গেছে।


হিউম্যানিটারিয়ান দৃষ্টিকোণ

আগুনে কোনো প্রাণহানি না হলেও সহস্রাধিক শ্রমিক এখন কর্মহীন, অনেকে হারিয়েছেন তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। স্থানীয় প্রশাসন জরুরি সহায়তা কার্যক্রম চালু করেছে, আর বিজিএমইএ বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসনে তারা উদ্যোগ নেবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5618 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 02:05:09 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh