২০২৫ সাল শেষ করতে যাচ্ছে রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। তবে বছর শেষের আগে মাঠে নামার বাকি রইল আরও দুটি লড়াই। নভেম্বর মাসে আফ্রিকার দুই শক্তিশালী দল সেনেগাল ও তিউনিসিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে তারা।
বৃহস্পতিবার এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ)।
প্রথম ম্যাচটি হবে আগামী ১৫ নভেম্বর লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে, যেখানে মুখোমুখি হবে সেনেগাল।
তিন দিন পর, ১৮ নভেম্বর ফ্রান্সের লিলেতে, ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ তিউনিসিয়া।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে নতুন কৌশল
সিবিএফ জানিয়েছে, আসন্ন ২০২৬ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই দুটি ম্যাচ তাদের প্রস্তুতি পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা। দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্ব শেষের পর বিভিন্ন মহাদেশের শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খেলে দলীয় কৌশল ও একাদশ চূড়ান্ত করতে চায় কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বিদায় নেওয়ার পর গত মে মাসে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেন এই ইতালিয়ান কোচ। হাতে থাকা সীমিত সময়ের মধ্যে তিনি দলকে নতুন ছন্দে সাজানোর চেষ্টা করছেন।
আনচেলত্তির লক্ষ্য, আগামী মার্চের মধ্যেই মূল একাদশ নির্ধারণ করা—যেখানে অভিজ্ঞতা ও তরুণ শক্তির মধ্যে থাকবে ভারসাম্য।
এশিয়ার অভিজ্ঞতা, এবার আফ্রিকার পরীক্ষা
চলতি মাসের আন্তর্জাতিক বিরতিতে ব্রাজিল খেলেছিল দুটি এশীয় দলের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫–০ গোলে উড়িয়ে দেয় তারা, তবে দ্বিতীয় ম্যাচে জাপানের কাছে ৩–২ গোলে হেরে কিছুটা হতাশ হয় সমর্থকরা।
তাই আফ্রিকার দুটি দলের বিপক্ষে আসন্ন ম্যাচগুলোকে সিবিএফ দেখছে “প্রকৃত প্রস্তুতির মঞ্চ” হিসেবে। কারণ, সেনেগাল ও তিউনিসিয়া তাদের আক্রমণ ও রক্ষণ—উভয় দিকেই ভারসাম্যপূর্ণ দল।
আফ্রিকার দুই হুমকি: সেনেগাল ও তিউনিসিয়া
সেনেগাল দল বর্তমানে আফ্রিকার সবচেয়ে ধারাবাহিক দলগুলোর একটি। তাদের আক্রমণভাগে রয়েছেন সাদিও মানে, নিকোলাস জ্যাকসন ও কালিদু কুলিবালির মতো তারকা ফুটবলার।
দুই বছর আগে লিসবনে এক প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিলকে ৪–২ গোলে হারিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল সেনেগাল। এবারও সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে মরিয়া তারা।
অন্যদিকে তিউনিসিয়া পরিচিত তাদের সুশৃঙ্খল রক্ষণভাগ ও ধৈর্যশীল খেলার ধরনে। তাই আনচেলত্তির দলের জন্য এটি হবে এক ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জ, যেখানে পাস-ভিত্তিক খেলার পাশাপাশি দ্রুত প্রতিআক্রমণের দক্ষতা যাচাই করা যাবে।
২০২৬ বিশ্বকাপের আগে বড় পরিকল্পনা
সিবিএফ জানিয়েছে, আগামী বছর মার্চের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপের শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে আরও কয়েকটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করা হবে।
এরপর বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে রিও দি জেনেইরোর ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ।
সিবিএফ বলেছে—
“আমরা চাই, বিশ্বকাপের আগে দেশের ভক্তদের সামনে দলকে উপস্থাপন করতে। খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মধ্যে ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
আনচেলত্তির জন্য পরীক্ষা, তরুণদের জন্য সুযোগ
ব্রাজিল দলে এই মুহূর্তে বেশ কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রমাণের অপেক্ষায় আছেন। যেমন— এন্ডরিক, ভিনি জুনিয়র, রদ্রিগো, গুইমারায়েসসহ অনেকে।
এই দুটি ম্যাচ হবে তাদের পারফরম্যান্স যাচাইয়ের সুযোগ এবং কোচের কৌশলগত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আদর্শ ক্ষেত্র।
বিশ্লেষকদের মতে, আফ্রিকার দলগুলোর বিপক্ষে খেলা ব্রাজিলকে শুধু শারীরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, মানসিক দৃঢ়তাও গড়ে তুলতে সাহায্য করবে—যা বড় টুর্নামেন্টে অপরিহার্য।
শেষ প্রস্তুতি, নতুন আশার বছর
২০০২ সালের পর ব্রাজিল আর বিশ্বকাপ জেতেনি। তাই ২০২৬ সালের টুর্নামেন্টের আগে এই প্রস্তুতিগুলোকে “স্বপ্ন পুনরুদ্ধারের যাত্রা” হিসেবে দেখছে সেলেসাওভক্তরা।
আনচেলত্তির কৌশল, তরুণদের উত্থান, এবং ভক্তদের প্রত্যাশা—সবকিছু মিলিয়ে নভেম্বরের এই দুটি ম্যাচই হতে যাচ্ছে বছরের শেষ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।