• হোম > রাজনীতি > রাকসু নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত প্যানেলের বিপুল জয়

রাকসু নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত প্যানেলের বিপুল জয়

  • শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৪
  • ৩৯

---

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্ররাজনীতিতে দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত রাকসু (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল বিপুল জয় পেয়েছে। ২৩টি পদের মধ্যে ২০টিতে জয় পেয়ে তারা একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে।

আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাকসু নির্বাচনের প্রধান কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।


শিক্ষার্থীদের রায়: এক দশকের নিস্তব্ধতা ভেঙে নতুন প্রবাহ

দীর্ঘ ৩৪ বছর পর অনুষ্ঠিত এই রাকসু নির্বাচন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র আগ্রহ ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শেষে গভীর রাতে ভোট গণনা শুরু হয়।
রাতভর গণনার পর আজ সকালে ঘোষিত ফলাফল শিক্ষাঙ্গনের ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন (আবীর) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট।

এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে একই জোটের এস এম সালমান সাব্বির জয় পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭৫ ভোটে, আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল-সমর্থিত জাহিন বিশ্বাস (এষা) পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৫১ ভোট।


যে তিন পদে জয় হয়নি শিবির–সমর্থিত প্যানেলের

জিএস (সাধারণ সম্পাদক), ক্রীড়া সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক—এই তিন পদে ভিন্ন প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

  • জিএস পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার বড় ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন।

  • ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় নার্গিস খাতুন, যিনি ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।

  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ (তোফা) জয়ী হয়েছেন।


ফলাফল ও ভোটের পরিসংখ্যান

রাকসুর ২৩টি পদে মোট ২৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
হল সংসদের ১৫টি পদে ৫৯৭ জন, আর সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫৮ জন প্রার্থী ছিলেন।
মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২৮,৯০১ জন, যার মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১১,৩০৫ এবং ছাত্র ভোটার ১৭,৫৯৬।
ভোট পড়েছে ৬৯.৮৩ শতাংশ, নারী হলে ভোট পড়েছে ৬৩.২৪ শতাংশ।


শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া: ভয় ও আশার মিশ্র অনুভূতি

ফলাফল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই বলেন, “এই নির্বাচন ছিল সাহসের পরীক্ষা।”
সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সমর্থক নওশাদুল হক বলেন,

“আমরা ভীতিহীনভাবে পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছি। দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র ফিরেছে।”

অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্মের প্রার্থী শেখ আবীর অভিযোগ করেন,

“ভোটের পরিবেশ অনেকাংশে প্রভাবিত ছিল। তবু আমরা জনগণের রায় মেনে নিচ্ছি।”


শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের অনেকে এই ফলাফলকে “শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির ভারসাম্য পুনর্গঠনের সূচনা” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে কেউ কেউ উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন—

“এই জয় যেন সহাবস্থান ও সহনশীলতার সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে, বিভক্তিকে নয়।”

রাবির রাজনৈতিক ইতিহাসে রাকসু সবসময়ই জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হয়েছে। তাই পর্যবেক্ষকদের মতে, এই নির্বাচনের ফলাফল শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথেও প্রভাব ফেলতে পারে।


শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও প্রশাসনের বক্তব্য

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন,

“কিছু অভিযোগ এলেও সামগ্রিকভাবে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ছিল। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে—তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা রাখে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, আগামী সপ্তাহে নতুন কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত হবে এবং রাকসু কার্যালয় পুনরায় চালু করা হবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5610 ,   Print Date & Time: Thursday, 27 November 2025, 06:49:03 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh