• হোম > বিদেশ > বিশ্বজুড়ে ই–কমার্সের দাপট

বিশ্বজুড়ে ই–কমার্সের দাপট

  • বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:১৭
  • ৬০

---

বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ধরন পাল্টে দিয়েছে ই–কমার্স। ঘরে বসে পণ্য কেনাকাটা এখন আর শুধু বিলাসিতা নয়, এটি হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পোশাক, ইলেকট্রনিকস, মুদি দ্রব্য থেকে শুরু করে বই, ওষুধ, এমনকি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য—সবকিছু এখন পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ই–কমার্সের বাজার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তারা যেমন এই খাতে যুক্ত হচ্ছেন, তেমনি পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল গ্রহণ করে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবসাইটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মের নাম। এই তালিকা শুধু ব্যবসার আয়তন নয়, বরং ডিজিটাল বিপ্লবে মানুষের অংশগ্রহণেরও প্রতিফলন।


১. অ্যামাজন – বৈশ্বিক অনলাইন বাজারের রাজা

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন। প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের হাত ধরে ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি আজ অনলাইন বাণিজ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
২০২৪ সালে অ্যামাজনের মোট বিক্রয় ছিল প্রায় ৭৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের প্রায় সব বড় বাজারে তাদের আধিপত্য প্রমাণ করে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে ৩৯ কোটি মানুষ অ্যামাজনের গ্রাহক।

অ্যামাজন শুধু একটি অনলাইন দোকান নয়, এটি এখন একটি ইকোসিস্টেম—যেখানে বই, পোশাক, প্রযুক্তিপণ্য, ভিডিও স্ট্রিমিং, ক্লাউড সার্ভিস থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত সবকিছু সংযুক্ত।


২. তাওবাও – চীনের ডিজিটাল বিপ্লবের প্রতীক

চীনের তাওবাও অনলাইন বাণিজ্যে এক অনন্য উদাহরণ। আলিবাবা গ্রুপের এই প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তি পর্যায়েও পণ্য কেনাবেচা সম্ভব।
২০২৪ সালে তাওবাওর মোট বিক্রয় মূল্য ছিল ৭২ হাজার ৩৮ কোটি ডলার, এবং তাদের সক্রিয় ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ৯৬ কোটি।

তাওবাওর শক্তি হলো স্থানীয় উৎপাদক ও সাধারণ বিক্রেতাদের সুযোগ করে দেওয়া—যা চীনের লাখো মানুষের জীবিকা বদলে দিয়েছে।


৩. টি–মল – ব্র্যান্ড ও ভোক্তার সেতুবন্ধন

আলিবাবা গ্রুপের আরেক সাইট টি–মল, যেখানে ব্র্যান্ডগুলো সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছায়।
২০২৪ সালে এর বিক্রয় ছিল প্রায় ৬৮ হাজার কোটি ডলার, সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ১০০ কোটি। এটি এখন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর কাছে চীনা বাজারে প্রবেশের প্রধান দরজা।


৪. পিনদুওদু – সাশ্রয়ী কেনাকাটার নতুন ধারণা

চীনের মোবাইলভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম পিনদুওদু দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২০২৪ সালে তাদের বিক্রি ছিল ৭১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, মাসিক ব্যবহারকারী ৭২ কোটি।
এই প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্যই হলো কম দামে ভালো পণ্য—যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়েছে।


৫. জেডি ডটকম – বিশ্বস্ততা ও সরাসরি সেবা

চীনের জেডি ডটকম ‘বিজনেস টু কনজিউমার’ বা B2C সিস্টেমে পরিচালিত হয়।
২০২৪ সালে বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য।
ইলেকট্রনিকস ও গৃহস্থালি পণ্যে নির্ভরযোগ্যতার কারণে এটি অন্যদের থেকে আলাদা।


৬. টেমু – নতুনদের মধ্যে বিশ্বজয়

চীনের পিনদুওদুর মালিকানাধীন টেমু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২০২৪ সালে বিক্রয় ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, ব্যবহারকারী ২৯ কোটি।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এটি এখন সবচেয়ে আলোচিত ই–কমার্স অ্যাপগুলোর একটি।


৭. ই–বে – পুরনো কিন্তু নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড

অনলাইন বাণিজ্যের পুরোনো নাম ই–বে। পিয়েরে অমিদিয়ারের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিতে এখনো ১৩ কোটির বেশি সক্রিয় ক্রেতা রয়েছে।
২০২৪ সালে বিক্রি ছিল ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
পণ্য পুনর্বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এখনো এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি।


৮. ওয়ালমার্ট – বাস্তব দোকান থেকে অনলাইন সাম্রাজ্য

বিশ্ববিখ্যাত খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট এখন ই–কমার্সেও শক্ত অবস্থানে।
২০২২ সালে বিক্রয় ছিল ১১ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার, সক্রিয় ব্যবহারকারী ১৬ কোটি ৬০ লাখ।
বিশেষত মুদি ও গৃহস্থালি পণ্য বিক্রিতে তারা ডিজিটাল রূপান্তরে সফল উদাহরণ স্থাপন করেছে।


৯. শপিফাই – উদ্যোক্তাদের হাতিয়ার

শপিফাই মূলত অনলাইন দোকান তৈরি ও পরিচালনার সেবা দেয়। ২০২৪ সালে এর মাধ্যমে ৮৭ কোটির বেশি মানুষ কেনাকাটা করেছে।
লাখ লাখ ছোট উদ্যোক্তা আজ শপিফাইয়ের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা গড়ে তুলেছে, যা ডিজিটাল উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিপ্লব এনেছে।


১০. দুইন (চীনে টিকটক) – বিনোদন থেকে বাণিজ্যে

দুইন, যেটি চীনে টিকটক নামে পরিচিত, ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে এখন ই–কমার্সে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।
লাইভ বিক্রয়, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও ব্যবহার করে এটি তরুণ প্রজন্মের কেনাকাটার ধরন পাল্টে দিয়েছে।


মানবিক ও সামাজিক প্রভাব

বিশ্বের এই ই–কমার্স বিকাশ শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, বরং মানুষের জীবনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র বিক্রেতা, এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও এখন ঘরে বসে আয় করছেন অনলাইন বিক্রির মাধ্যমে।
তবে চ্যালেঞ্জও আছে—ডেলিভারি নিরাপত্তা, ডেটা প্রাইভেসি, এবং শ্রম অধিকারের প্রশ্নে এখনো অনেক পথ বাকি।

বিশ্বব্যাপী এই ই–কমার্স বিপ্লব একদিকে বাজারকে ডিজিটাল করেছে, অন্যদিকে মানবিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির নতুন অধ্যায়ও খুলে দিয়েছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5603 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 12:28:50 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh