স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের জগতে আসছে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন। এবার এক হতে যাচ্ছে গুগলের দুটি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম—অ্যানড্রয়েড ও ক্রোম ওএস।
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন সামিট ২০২৫-এ গুগলের ডিভাইস ও সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক ওস্টারলো এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানান, স্মার্টফোন ও পিসি—এই দুই আলাদা বিশ্বের মধ্যে থাকা প্রযুক্তিগত বিভেদ মুছে দিয়ে গুগল এখন একটি সর্বজনীন অপারেটিং সিস্টেম তৈরির পথে হাঁটছে।
“আমরা পিসি ও স্মার্টফোনের জন্য যে সিস্টেম তৈরি করেছিলাম, তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন সেই পার্থক্য দূর করে একটি সাধারণ প্রযুক্তিগত ভিত্তি তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছি,”
বলেছেন রিক ওস্টারলো।
এক প্ল্যাটফর্মে সব ডিভাইস
নতুন এই প্রযুক্তির লক্ষ্য হলো—ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ—সব ডিভাইসেই অ্যানড্রয়েডকে অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
অর্থাৎ ব্যবহারকারী একবার গুগলের কোনো অ্যাপ বা সার্ভিসে লগইন করলে, সেটি সব ডিভাইসে একইভাবে কাজ করবে। এতে ফোন থেকে ডেস্কটপে স্থানান্তরের ঝামেলা থাকবে না।
কেন এই পরিবর্তন
মূলত গুগল চাইছে তাদের জেমিনাই এআই, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ক্রোম, ইউটিউব, গুগল ড্রাইভসহ সব সেবা যেন শুধু মোবাইল নয়, পিসি ব্যবহারকারীরাও একসঙ্গে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।
এই পরিকল্পনার মাধ্যমে গুগল এমন এক সফটওয়্যার ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চায়, যা মাইক্রোসফ্ট (উইন্ডোজ) ও অ্যাপল (ম্যাকওএস ও আইওএস)-এর আধিপত্যের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে।
কোয়ালকমের প্রতিক্রিয়া
কোয়ালকমের সিইও ক্রিস্টিয়ানো অ্যামন জানিয়েছেন, তিনি গুগলের নতুন এই ওএসের ঝলক দেখেছেন এবং সেটি নিয়ে আশাবাদী।
“আমি নতুন এই সিস্টেম দেখেছি—এটি অসাধারণ। মোবাইল ও পিসির অভিন্নতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে এই সফটওয়্যার,”
বলেছেন ক্রিস্টিয়ানো অ্যামন।
বাজারে কবে আসছে
যদিও গুগল এখনও নির্দিষ্ট করে বলেনি এই নতুন হাইব্রিড ওএস কবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে, তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করছেন—২০২৬ সালের মধ্যেই এর প্রথম প্রোটোটাইপ বা ডেভেলপার সংস্করণ বাজারে আসতে পারে।
তারা বলছেন, এটি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে “অ্যানড্রয়েড ল্যাপটপ” বা “ক্রোম ফোন”—এর মতো ধারণা বাস্তবে রূপ নিতে পারে।
বিশ্লেষণ: এক অপারেটিং সিস্টেম, অসীম সম্ভাবনা
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, গুগলের এই উদ্যোগ সফটওয়্যার দুনিয়ায় এক বড় বিপ্লব আনবে। এখন পর্যন্ত পিসি মানেই উইন্ডোজ বা ম্যাক—এই ধারণা বদলে যেতে পারে।
এছাড়া একক প্ল্যাটফর্মে সব ডিভাইস চললে ডেভেলপারদের জন্যও সুবিধা বাড়বে। একটি অ্যাপ একবার তৈরি করলেই তা ফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার—সব জায়গায় একসঙ্গে কাজ করবে।