অস্ট্রেলিয়ার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মুঠোফোন নিষিদ্ধ করার দুই বছর পর এর প্রভাব এখন স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বলছেন—এই নীতি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে, পাশাপাশি সরাসরি সামাজিক সম্পর্কও জোরদার হয়েছে।
নীতির সূচনা ও উদ্দেশ্য
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিশ্চিয়ান কলেজের মেলবোর্ন শাখায় ফোন নিষিদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ বৃদ্ধি ও বিভ্রান্তি কমানো।
অধ্যক্ষ ক্যালেব পিটারসন বলেন,
“যখন ফোন হাতের নাগালে থাকে, শিক্ষার্থীর মন কখনো পুরোপুরি শ্রেণিকক্ষে থাকে না। আমরা চাইছিলাম, তারা যেন আবার শেখার পরিবেশে মনোযোগী হয়।”
এখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে প্রবেশের আগে ফোন ব্যাগ বা লকারে রাখতে হয়; হাতে ধরা পড়লে সেটি জব্দ করে দিনের শেষে ফেরত দেওয়া হয়।
দেশজুড়ে বিস্তার
২০২০ সালে প্রথম ভিক্টোরিয়া প্রদেশে এই নীতি চালু হয়।
এরপর ২০২৩ সালের মধ্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া একই পদক্ষেপ নেয়।
২০২৪ সালের শুরুতে কুইন্সল্যান্ডও ফোন নিষিদ্ধ করে।
নীতি ঘোষণার পর থেকেই এটি অভিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। অনেকে বিশ্বাস করতেন, এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়বে, শিক্ষকরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে পাঠদান করতে পারবেন, আর শ্রেণিকক্ষের সামাজিক পরিবেশও উন্নত হবে।
দুই বছর পর ফলাফল
দুই বছর পর শিক্ষকরা বলছেন—শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ও অংশগ্রহণ বেড়েছে।
অধ্যক্ষ পিটারসন বলেন,
“পাঠ শুরু এখন আরও শক্তিশালী, বাধা অনেক কমেছে, বন্ধুত্বও দৃঢ় হচ্ছে।”
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের জরিপে দেখা যায়—
-
৯৫% প্রধান শিক্ষক এখনো নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করছেন,
-
৮৬% মনে করেন সামাজিক মেলামেশা বেড়েছে,
-
৮৭% বলেন শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার গবেষণায়ও দেখা গেছে,
৭০% শিক্ষক মনোযোগ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন এবং ৬৪% বলেছেন ফোনজনিত সংঘাত কমে গেছে।
বিতর্ক ও সমালোচনা
তবে সবাই এই নীতিকে স্বাগত জানাননি।
পশ্চিম সিডনির সাবেক শিক্ষার্থী রুকাইয়া বলেন,
“ফোন কেড়ে নেওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী উদ্বিগ্ন ছিল। তারা গোপনে ফোন ব্যবহারের পথ খুঁজে নিয়েছে। ফোন আমাদের নিরাপত্তার অনুভূতি দিত, সেটি হঠাৎ হারানো মানসিক চাপ তৈরি করেছে।”
তবু অনেক শিক্ষার্থী স্বীকার করেছে—ফোন নিষিদ্ধের ফলে অনলাইন হয়রানি, প্রতারণা ও গোপনে ছবি তোলার ঘটনা কমেছে।
শিক্ষণ উপকরণ হিসেবে ফোনের বিকল্প
মেলবোর্নের একটি সিলেকটিভ হাই স্কুলের অধ্যক্ষ টনি মরদিনি বলেন,
“ফোন নিষিদ্ধের পর মনোযোগ বেড়েছে ও সাইবার বুলিং কমেছে। তবে ফোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণ উপকরণও ছিল। এখন স্কুলগুলোকে বিকল্প প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।”
অন্যদিকে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিল সেলউইন বলেন,
“ফোন নিষেধাজ্ঞা জনপ্রিয় হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত স্কুলের মধ্যে শিক্ষাগত ফলাফল বা মানসিক স্বাস্থ্যে বড় পার্থক্য দেখা যায়নি।”
‘স্বস্তির দিন’ বলছে শিক্ষার্থীরা
অধ্যক্ষ পিটারসনের মতে, এই নীতি কোনো জাদুকরি সমাধান নয়,
কিন্তু শেখা, বন্ধুত্ব গড়া ও মানসিক স্বস্তির পরিবেশ তৈরিতে এটি কার্যকর।
অনেক শিক্ষার্থীও বলেছে, ফোনবিহীন দিন তাদের জন্য একধরনের শান্তি ও বিরতির সময়।