• হোম > বাংলাদেশ > ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শিক্ষকদের অবস্থান

ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শিক্ষকদের অবস্থান

  • সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:১৮
  • ২৪

---

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান করছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
তাদের মূল দাবি—
১️মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া,
২️দেড় হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা,
৩️উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীতকরণ।

এই তিন দফা দাবিতে তাঁরা সোমবার সকাল থেকেই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।


শিক্ষকদের কণ্ঠে প্রতিবাদের স্লোগান

সকাল ১০টার দিকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দেখা যায়—
শত শত শিক্ষক ও কর্মচারী হাতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করছেন।
প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তাদের কণ্ঠে পরিচিত স্লোগান—

“বিশ পার্সেন্ট বাড়ি ভাড়া, দিতে হবে দিয়ে দাও!”
“অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন, দিতে হবে দিয়ে দাও!”
“১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, দিতে হবে দিয়ে দাও!”

অনেকেই কাঁধে ব্যাগ, পাশে শিক্ষার্থীদের ছবি, আর মুখে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা—
‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে ফিরব না।’


‘আমরা রাজনীতি করি না, শুধু ন্যায্য অধিকার চাই’

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ ভুঁইয়া বলেন,

“আমরা এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। শুধু আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি।”

তিনি জানান, তার এলাকায় অন্তত ৯০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কর্মবিরতি চলছে।
শিক্ষকরা এখন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ভেবে দুশ্চিন্তায়, তবুও তাঁরা বিশ্বাস করেন—
“ন্যায় না পেলে শিক্ষা টিকবে না।”


সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি, তবুও আশাবাদী শিক্ষকরা

‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন,

“এখনও পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের কোনো পক্ষ আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেনি। তবে বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়েছি, দাবি পূরণে মন্ত্রণালয় তৎপর রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, শিক্ষকদের এই আন্দোলন কোনো দলের নয়—
এটি দেশের কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের ন্যায্যতা ও মর্যাদার আন্দোলন।


প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনার: এক রাতের দীর্ঘ যাত্রা

গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন।
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করায় প্রায় ছয় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

পরে পুলিশ লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
কিন্তু তাতে থামেননি তাঁরা—
বিকেল তিনটার দিকে শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে নতুন করে অবস্থান নেন।
সেখানে তাঁরা রাতে অবস্থান করেন এবং সোমবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।


‘শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পূরণে বাড়তি ক্লাস নেব’

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন—
কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের যে একাডেমিক ক্ষতি হবে,
তা পূরণে তাঁরা প্রয়োজনে শুক্র ও শনিবার বাড়তি ক্লাস নেবেন।

একজন শিক্ষক বলেন,

“আমরা শিক্ষার্থী বঞ্চিত হোক চাই না, কিন্তু নিজেদের অধিকার নিয়েও চুপ থাকতে পারি না।”


তিন দফা দাবির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

মূল বেতনের ২০% বাড়িভাতা সংযোজন।
শিক্ষক ও কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকায় উন্নীতকরণ।
উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা।


এক মানবিক আহ্বান

শিক্ষকদের মুখে ক্লান্তি, হাতে ব্যানার, কিন্তু চোখে একটাই ভাষা—
সম্মান, ন্যায় আর মর্যাদা।

একজন নারী শিক্ষক বলেন,

“আমরা জ্ঞানের আলো জ্বালাই, অথচ নিজেদের জীবনে অন্ধকারে আছি।”

তাঁদের এই দাবি কেবল বেতন নয়,
এটি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি এক মানবিক বিনিয়োগের আহ্বান।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5502 ,   Print Date & Time: Monday, 13 October 2025, 01:45:12 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh