গাজায় আটক ২০ জন জীবিত জিম্মি এবং ইসরায়েলে বন্দী ১ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির নাম প্রকাশ করেছে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড।
আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) সংগঠনটি তাদের আধিকারিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করে।
এই প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়েছে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে বড় মানবিক বিনিময় প্রক্রিয়া—যা বিশ্বের চোখে আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বন্দিবিনিময় চুক্তি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী,
আজ সোমবার হামাসের হাতে থাকা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে,
এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক দুই হাজারের কাছাকাছি ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে তেল আবিব সরকার।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাবে, বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন জিম্মি রয়েছেন,
যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে নিশ্চিত করেছে হামাস।
দুই প্রান্তের অপেক্ষা: একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে অশ্রু
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিপ্রত্যাশী পরিবারের সদস্যরা আজ সকালে
দক্ষিণ ইসরায়েলের রেইম সামরিক ঘাঁটিতে এবং
তেল আবিবের ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ সমবেত হন।
কেউ হাতে নিয়ে ছিলেন ইসরায়েলি পতাকা, কেউবা প্রিয়জনের ছবি ও নাম লেখা ব্যানার—
আশা, প্রার্থনা আর কান্না মিলেমিশে এক অব্যক্ত বেদনায় ভরা দৃশ্য।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের গাজা শহরের নাসের হাসপাতাল,
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ ও পূর্ব জেরুজালেমে,
বন্দীদের পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করছেন তাঁদের প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আশায়।
রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে বিনিময় প্রক্রিয়া
আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) পুরো বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করছে।
আইসিআরসি-র বাসগুলো ইতোমধ্যে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় পৌঁছেছে
ইসরায়েলি জিম্মিদের নেওয়ার জন্য।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে
আরও কয়েকটি রেডক্রসের গাড়ি ইসরায়েলের ওফের কারাগারের সামনে অবস্থান করছে।
আইসিআরসি জানিয়েছে, উভয় পক্ষের নিরাপত্তা ও মানবিক মর্যাদা বজায় রেখেই বিনিময় সম্পন্ন করা হবে।
মানবিক আশার আলোয় যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট
এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর।
গত এক বছরে গাজায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির পর,
এই বন্দিবিনিময় বিশ্বজুড়ে এক মানবিক আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেন,
“এটি কেবল রাজনৈতিক চুক্তি নয়, বরং মানবতার জয়।”
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই প্রক্রিয়াকে
‘মানবিক শান্তির প্রথম ধাপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বিনিময়ের প্রতীক: একে অপরের চোখে মুক্তির প্রতিফলন
এই বন্দিবিনিময় শুধুমাত্র সংখ্যার হিসাব নয়;
এটি দুই জাতির বেদনা, আশা, প্রতিশ্রুতি ও পুনর্মিলনের গল্প।
গাজার রাস্তায় যেমন মায়ের কান্নায় আশার প্রতিধ্বনি,
তেমনি তেল আবিবের স্কয়ারে বেজে ওঠা করতালির শব্দে
মানবতার এক অভিন্ন চেতনা ধ্বনিত হচ্ছে—
“যুদ্ধ নয়, শান্তিই শেষ কথা।”