• হোম > বাংলাদেশ > স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ একীভূত হচ্ছে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ একীভূত হচ্ছে

  • সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৮
  • ২২

---

দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভাজন ও সমন্বয়হীনতা কাটাতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ— স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ— একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সরকার বলছে, এই একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের জন্য আরও সহজলভ্য ও সমন্বিত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, যাতে সাধারণ মানুষ দ্রুত ও কার্যকর সেবা পান।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন,

“সরকার নীতিগতভাবে এই একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।”

কেন একীভূতকরণ প্রয়োজন?

২০১৭ সালে স্বাস্থ্যখাতকে আরও কার্যকর করার আশায় সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করেছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় দেখা যায়, বিভাজনের ফলে বরং সমন্বয়হীনতা ও কাজের পুনরাবৃত্তি বেড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন,

“দুটি বিভাগে ভাগ করার ফলে একাধিকবার একই কাজ করা হয়েছে, যা সময় ও সম্পদের অপচয় ঘটিয়েছে। সমন্বয়ের অভাবে মাঠপর্যায়ে সেবার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

তিনি জানান, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে গিয়েছিল, আর কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ছিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায়। একইভাবে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দায়িত্ব ছিল দুই বিভাগের মধ্যে ভাগ।
ফলে একই হাসপাতালের দুটি অংশ দুই বিভাগে পড়ায় প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়।

প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ও অগ্রগতি

একীভূতকরণের প্রস্তাব ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে এবং শিগগিরই এটি প্রি–এনআইসিএআর (জাতীয় প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়ন কমিটি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি নতুন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও জনবল অনুমোদনের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন এনআইসিএআর সভায় সুপারিশ পাঠায়।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সাবেক সচিব সরোয়ার বারী গত ২৮ আগস্ট অবসর নেন। এরপর থেকে বিভাগটিতে নতুন সচিব নিয়োগ না দিয়ে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

সংস্কার কমিশনের মতামত

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মন্ত্রণালয় বিভক্ত করার কারণে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন প্রত্যাশিত হয়নি। বরং এতে প্রশাসনিক জটিলতা ও সমন্বয় সংকট বেড়েছে।

অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন,

“এই একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য উন্নত সমন্বয় নিশ্চিত করা এবং কাজের পুনরাবৃত্তি এড়ানো। যতক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী স্বাস্থ্য কমিশন গঠন না হয়, এই একীভূত ব্যবস্থা জনগণের জন্য বাস্তব সুফল আনবে।”

মানবিক দৃষ্টিকোণ

স্বাস্থ্যসেবা মানে কেবল হাসপাতালের পরিসংখ্যান নয়—এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, আশার প্রতীক এবং রাষ্ট্রের মানবিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।
গ্রামীণ জনপদ থেকে শহরের নাগরিক—সবাই যেন সমানভাবে চিকিৎসা সুবিধা পান, সেই নিশ্চয়তার জন্য এই একীভূতকরণ হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক পদক্ষেপ।

স্বাস্থ্যসেবা যখন এক ছাতার নিচে আসবে, তখন নীতিনির্ধারণ থেকে মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়ন—সবকিছুতেই আসবে গতি ও স্বচ্ছতা।
এটি শুধু প্রশাসনিক সংস্কার নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে মানবিক অগ্রযাত্রার এক নতুন অধ্যায়।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5496 ,   Print Date & Time: Monday, 13 October 2025, 11:28:38 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh