দীর্ঘ প্রস্তুতি, অগণিত স্বপ্ন, আর মাঠে নিবেদন—সবকিছুর সম্মিলনে অবশেষে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল ঘানা।
আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাই পর্বে রবিবার রাতে কোমোরোসকে ১–০ গোলে হারিয়ে পঞ্চম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে ‘ব্ল্যাক স্টার্স’।
এই জয় শুধু ফুটবল নয়, এক জাতির আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
ঘানার রাজধানী আক্রার স্টেডিয়ামে হাজারো দর্শকের উল্লাস, চোখেমুখে আনন্দের অশ্রু—সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবের রাত।
কুদুসের গোলে বিশ্বমঞ্চে ঘানা
মোহাম্মদ কুদুসের একক দক্ষতায় ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে।
তার গোলেই কোমোরোসের বিপক্ষে ১–০ ব্যবধানের জয় তুলে নেয় ঘানা।
এর ফলে গ্রুপ ‘আই’–এর শীর্ষে থেকে তারা বাছাই নিশ্চিত করে।
এই জয়ের পর ১০ ম্যাচে ঘানার পয়েন্ট দাঁড়ায় ২৫।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা মাদাগাস্কার থেকে তারা ৬ পয়েন্টে এগিয়ে।
মাদাগাস্কার যদি জিততও, তবে ঘানাকে টপকাতে দরকার ছিল অন্তত ৮ গোলের ব্যবধান, যা ছিল কার্যত অসম্ভব।
শেষ পর্যন্ত মালির কাছে ৪–১ গোলে হেরে তাদের স্বপ্নও ভেঙে যায়।
আফ্রিকার মুখ উজ্জ্বল করা দেশগুলো
আফ্রিকা মহাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত ৫টি দেশ নিশ্চিত করেছে তাদের জায়গা—
আলজেরিয়া, মিসর, মরক্কো, তিউনিসিয়া এবং ঘানা।
ঘানা এবার একমাত্র দেশ, যারা উত্তর আফ্রিকার বাইরে থেকে বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে।
এই অর্জন তাই আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলের জন্যও গর্বের।
সালাহর মিসরও জিতেছে
রোববার রাতের আরেক ম্যাচে মোহাম্মদ সালাহর নেতৃত্বে মিসর ১–০ গোলে হারিয়েছে গিনি–বিসাউকে।
কায়রোতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে জয়সূচক গোলটি করেন ডিফেন্ডার মোহাম্মদ হামদি।
এর আগে বুধবার জিবুতির বিপক্ষে ৩–০ ব্যবধানের জয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল মিসর।
একই গ্রুপে বুরকিনা ফাসো ২–১ গোলে হারিয়েছে ইথিওপিয়াকে, যা তাদের প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে।
নাইজারও জাম্বিয়াকে ১–০ গোলে হারিয়ে এখনো লড়াইয়ে টিকে আছে।
অপেক্ষায় আফ্রিকার আরও চার গ্রুপ
আফ্রিকার মোট ৯টি গ্রুপের মধ্যে এখনো ৪টি গ্রুপের ভাগ্য নির্ধারণ বাকি।
আজ রাতে ইতিহাস গড়ার সুযোগ রয়েছে কেপ ভার্দের সামনে—
এসওয়াতিনিকে হারাতে পারলে তারাও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে জায়গা করে নেবে।
২০২৬ বিশ্বকাপে আফ্রিকা থেকে সরাসরি সুযোগ পাবে ৯টি দল,
আর ইন্টারকনফেডারেশন প্লে–অফের মাধ্যমে আরও একটি দলের সুযোগ থাকবে ফুটবলের এই মহাযজ্ঞে যোগ দেওয়ার।
ঘানার জয়: প্রেরণার প্রতীক
ঘানার ফুটবল ইতিহাসে এই অর্জন শুধু খেলাধুলার নয়, এটি জাতির ঐক্য ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।
২০১০ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে পুরো বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছিল দলটি।
১৫ বছর পর আবারও তারা বিশ্বকাপে ফিরছে নতুন উদ্যমে।
ঘানার অধিনায়ক ম্যাচ শেষে বলেন,
“এটি শুধু আমাদের নয়, এটি আফ্রিকার গর্ব। এই জয়ে আমরা প্রমাণ করেছি—সংগ্রাম কখনো বৃথা যায় না।”