বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড প্রতিরোধে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি আজ রোববার (১২ অক্টোবর) শুরু হয়েছে। মাসব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
সকালে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকা নিতে শিশুদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা হাসিমুখে টিকা নিচ্ছে, আর শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদের পাশে থেকে সাহস যোগাচ্ছেন।
কারা টিকা পাবে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশুকে এক ডোজ টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে—সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে।
জন্মসনদ না থাকা শিশুরাও এই টিকা নিতে পারবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত, এরপর যেসব শিশু বিদ্যালয়ে যায় না, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়া হবে।
শহর এলাকার পথশিশুদের টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)।
এটাই দেশের প্রথম টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইন
বাংলাদেশে এটাই প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকার গণক্যাম্পেইন। আগে শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় বা বিশেষ প্রকল্পের আওতায় টিকা দেওয়া হতো। এখন থেকে এটি জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির (EPI) অংশ হিসেবে নিয়মিতভাবে পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এরই মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ শিশু টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে, এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই টিকা
টাইফয়েড একটি জীবাণুজনিত সংক্রামক রোগ, যা দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাবে, প্রতিবছর বিশ্বে ১ কোটির বেশি মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়।
বাংলাদেশে টাইফয়েডে আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু-কিশোর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই টিকা টাইফয়েড সংক্রমণ ৮০–৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্তা
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“টাইফয়েডের মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করা এখন সরকারের অগ্রাধিকার। এই টিকা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করবে।”
সরকারের পাশাপাশি ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং গাভি (GAVI)-র সহায়তায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
উপসংহার
বাংলাদেশে টাইফয়েড প্রতিরোধে এই গণটিকাদান কর্মসূচি দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতে টাইফয়েডজনিত মৃত্যুহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।