বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ রবিবার (১২ অক্টোবর) ইতালির রাজধানী রোমে যাচ্ছেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের মূল অধিবেশনে অংশ নিতে।
সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে তিনি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা দেবেন।
ড. ইউনূস এই ফোরামের মূল অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন। তাঁর সঙ্গে সফরে রয়েছেন অর্থনীতি, কৃষি ও পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধি দল।
ফোরামে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম (WFF) হলো জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) আয়োজিত একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের নীতিনির্ধারক, গবেষক, উদ্যোক্তা ও তরুণ উদ্ভাবকরা একত্রিত হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই খাদ্যব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
চলতি বছরের ফোরামটি ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রোমে এফএওর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ড. ইউনূস ১৪ অক্টোবর মূল অধিবেশনে বক্তৃতা দেবেন বলে জানা গেছে। তিনি সেখানে দারিদ্র্য নিরসন, টেকসই কৃষি, এবং মানবকেন্দ্রিক অর্থনীতি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন।
রোমে বৈঠক হবে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে
এই সফরে ড. ইউনূসের সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকগুলোতে আলোচনার মূল বিষয় থাকবে—
-
খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিতে উদ্ভাবন,
-
দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান,
-
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা,
-
এবং মানবিক সহায়তার ন্যায্য বণ্টন।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এটি তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর, যা আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও মানবিক সক্রিয়তার নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশে নতুন ভাবমূর্তির বার্তা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিন ধরেই টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক ব্যবসার বৈশ্বিক দূত হিসেবে পরিচিত।
তিনি গ্রামীণ ব্যাংক মডেলের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করেছেন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে মানবিক উদ্যোগের রোল মডেল হয়ে উঠেছেন।
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে তাঁর অংশগ্রহণ বাংলাদেশের পক্ষে এক বড় সুযোগ, যেখানে দেশের কৃষি উদ্ভাবন, খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও দারিদ্র্য মোকাবিলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হবে।
এক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা বলেন,
“প্রধান উপদেষ্টার এই সফর শুধু কূটনৈতিক নয়, মানবিক উদ্যোগেরও প্রতিফলন। খাদ্য নিরাপত্তা এখন মানবতার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ, আর ড. ইউনূস সেখানে মানবকেন্দ্রিক সমাধানের বার্তা দেবেন।”
মানবতার কণ্ঠে বাংলাদেশের উপস্থিতি
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের এবারের মূল প্রতিপাদ্য “Empowering Local Action for Global Impact”, অর্থাৎ স্থানীয় উদ্ভাবন ও মানবিক কর্মকে বৈশ্বিক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা।
এই প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের অংশগ্রহণ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তিনি সব সময় বলেছেন—
“মানুষই পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি; প্রযুক্তি নয়, মানবিক মূল্যবোধই টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি।”
বাংলাদেশের কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উদাহরণ দিয়ে তিনি দেখাবেন কীভাবে স্থানীয় পর্যায়ের উদ্ভাবনও বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশে ফেরার সূচি
সফরসূচি অনুযায়ী, ড. ইউনূস আগামী ১৫ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।
রোমে অবস্থানকালে তিনি ফোরামের বিভিন্ন উপ-অধিবেশনে অংশ নেবেন এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানা গেছে।
শেষ কথা
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অংশগ্রহণ শুধু বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করছে না, এটি মানবিক অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ন্যায্যতার এক নতুন দৃষ্টান্তও স্থাপন করছে।
রোমের এই বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশের উপস্থিতি মানবতার পক্ষে এক গর্বিত কণ্ঠস্বর হিসেবে ইতিহাসে থেকে যাবে।