• হোম > Following > ডা. জাহাঙ্গীর কবির এর ডায়েট চার্ট : নতুনরা যেভাবে শুরু করবেন

ডা. জাহাঙ্গীর কবির এর ডায়েট চার্ট : নতুনরা যেভাবে শুরু করবেন

  • বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৯:৩৫
  • ৯৭৭

---
মূল- ডা. জাহাঙ্গীর কবির
শ্রুতিলিখন- আবুল কালাম আজাদ
————————————–
“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর” কথাটি অনেকের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা না পেলেও যখন বিশ্বাসটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত এবং অনেক মানুষ কর্তৃক পরীক্ষিত। তখন কিন্তু আর বিশ্বাসটি অবিশ্বাসের জায়গায় বসে থাকে না, বা তার গ্রহণ যোগ্যতা নিয়েও কোন প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না।

কথা বলছিলাম ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির স্যারের দেওয়া ডায়েট প্রসঙ্গ নিয়ে। আপনারা হয়তো নানা জনের মুখ থেকে বা স্যারের ভিডিওগুলো দেখে বুঝতে পারছেন ডায়াবেটিস রোগী, ওষুধবিহীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন এবং মোটা বা স্থূল মানুষগুলো খুব অল্প দিনেই শরীরের স্থূলতা কমিয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠেছেন, কিন্তু আপনারা অনেকেই ডায়েটে যেতে বা শুরু করতে ভয় পাচ্ছেন, তার একটাই কারণ- আপনাদের মস্তিষ্কের একটি বদ্ধমূল ধারণা, আর সেটা হলো, জন্মের দুই তিন বছর পর থেকেই যেখানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠেছে ভাত, রুটি, মাছ, মাংসের উপর সেখানে ভাত রুটিবিহীন জীবন যাপন যেন পাগলের প্রলাপ। কিন্তু এই বদ্ধমূল ধারণা বা ঐতিহ্য, স্যারের পরামর্শে কিছু মানুষ যখন কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয় তখন হয়তো আপনাদের মনে বিশ্বাস প্রতিস্থাপন হয়। আর তাদের জন্যই আমার এই লেখা।

প্রতিজ্ঞা, ধৈর্য, এবং সহনশীলতা, এই তিনটা জিনিস আপনাকে ডায়েট শুরু করার আগে নিজের অনুকূলে আনতে হবে।

প্রতিজ্ঞা হলো সেই বিষয়টা, আপনার এমন একটা মনোভাব থাকতে হবে, আমাকে পারতেই হবে। দশজনে যেটা পারছে সেটা আমি কেন পারবো না?

প্রতিটি বিষয়ে কিছু ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। হুট করেই আপনার এক দিনে দশ কেজি ওজন কমে যাবে না বা এক দিনেই দশ বছরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এর জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, অনুশীলন করতে হবে এবং নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মানতে হবে।

তো কথা না বাড়িয়ে কিভাবে ডায়েট শুরু করবেন তা বিস্তারিত বর্ণনা করা যাক। আশা করি বিষয় গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়বেন এবং মানার চেষ্টা করবেন। যা কিছু উল্লেখ করছি তা সম্পূর্ণটাই ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির স্যারের বিভিন্ন ভিডিও এবং রোগীদের সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া।

আপাতত মোটেও খাওয়া যাবে না-

যা খাওয়া যাবে বা খেতে বাঁধা নেই-

কিভাবে ডায়েট শুরু করবেন

সকালের নাস্তা
———————-
যাদের সকালে খাওয়ার অভ্যাস তারা আটটা বা সাড়ে আটটার দিকে দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ চা, আদা, লেবু, সামান্য লবণ দেওয়া যেতে পারে। কুসুম গরম পানির সাথে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বা কোকোনাট ভিনেগার খেতে পারেন এবং কুসুম গরম পানির সাথে লেবু চিপে খেতে পারেন। এছাড়া যাদের দেরিতে নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস, তারা এগারোটার দিকে নাস্তা করবেন এবং দুপুরের খাবার আড়াইটা তিনটায় খাবেন। আর সকাল আটটায় নাস্তা খেলে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেতে হবে।

দুপুরের খাবার
———————
দুপুরের খাওয়ার আগে অবশ্যই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। এতে আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে না এবং চর্বি কাটতে সাহায্য করবে। শাক, সবজি অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল দিয়ে রান্না করবেন এবং মাছ ভাজলে (ডীপ ফ্রাই থেকে বিরত থাকবেন এতে খাদ্যগুণ নষ্ট হয়) বা রান্না করলে এই তেল দিয়েই করবেন। সবজি যতটুকু সম্ভব কম সেদ্ধ করবেন। যেন সবজির গুণগত মান ঠিক থাকে। ডিম কুসুমসহ ঘি বা মাখন দিয়ে ভেজে খাবেন। এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়টা ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন কোন সমস্যা নেই। কারণ, ডিম প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাটের উৎস। তবে একবার ফ্যাট অ্যাডাপটেশন হয়ে গেলে চাইলেও এত খেতে পারবেন না। দেশি মুরগি খেতে পারেন, এক দুই টুকরো অথবা উল্লিখিত গরুর মাংস। মাছ খেলে গোস্ত খাবেন না। গোস্ত খেলে মাছ খাবেন না। এছাড়া প্রবাসীরা ফার্মের মুরগি এক টুকরো করে খেতে পারেন, কারণ আমার জানা মতে সেখানে ফার্মের মুরগিকে আদর্শ খাবার খাওয়ানো হয় (যদিও মুরগী ব্যায়াম করে না যেটা দেশী মুরগী করে )। দুম্বা, উট, ভেড়ার, মাংস খেলে এক টুকরোর বেশি নয়। দুপুরের মেন্যুতে , শাক, সবজি মাছ অথবা মাংস , ঘি এ ভাজা ডিম, ঘি’য়ে ভাজা বাদাম সাথে বাটার রাখতে পারেন এবং অবশ্যই শসা বা শসার সালাদ রাখবেন টমেটো গাজরও।

বিকেলে ক্ষুধা লাগলে উপরে উল্লেখিত চা, বাটার কফি এবং বাদাম খাবেন যে কোন প্রকার মাখন বা ঘি দিয়ে ভাজা বা মেশানো।

রাতের খাবার
——————–
রাতের খাবারের পূর্বেও ভিনেগার মিশ্রিত এক গ্লাস পানি খেয়ে নেবেন এবং রাতের খাবার দুপুরের অনুরূপ খাবেন। আইটেম দুই একটা কম বেশি হোক কোন সমস্যা নেই। রাত আটটার আগেই সমস্ত খাবার শেষ করুন। এরপর আর পানি ছাড়া কিছুই খাবেন না।

মধু ও মিষ্টি ফল কেন খাওয়া যাবে না?

মধু এবং মিষ্টি ফলে আছে চিনি যা শর্করা হিসাবে আমাদের শরীর গ্রহণ করে। আপনি যখন ডায়েট শুরু করবেন, তখন শর্করা জাতীয় খাদ্য না খাওয়ায় শরীরে শর্করার ঘাটতি দেখা দেবে, তখন শরীর গ্লাইকোজেন পোড়াবে। এরপর গ্লাইকোজেন শেষ হয়ে গেলে কিন্তু আমাদের শরীর তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শরীরে জমে থাকা চর্বি গলিয়ে সেখান থেকে শক্তি গ্রহণ করবে। কই’য়ের তেল দিয়ে কই ভাজার মতো। একেই বলে ফ্যাট অ্যাডাপটেশন। এখন যদি আপনি মধু, মিষ্টি ফল, চিনি জাতীয় শর্করা খাবার খান তবে আপনার শরীর ফ্যাট বার্নিং না করে এখান থেকেই তার প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করবে। যার ফলশ্রুতিতে আপনার ফ্যাট বার্নিংও হবে না এবং আপনার স্বাস্থ্য এবং ডায়াবেটিসও কন্ট্রোলে থাকবে না। এ কারণেই ডায়েট অবস্থায় সমস্ত প্রকার শর্করা, মধু , মিষ্টি ফল ও চিনি খেতে নিষেধ করা হয়। একটা মিষ্টি খাবেন, দুই তিনটা মিষ্টি ফল খাবেন, এক চামচ চিনি বা মধু খাবেন, এক বেলা ভাত বা রুটি খাবেন, আপনার শরীর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ফ্যাট বার্নিং বন্ধ করে দেবে!

যে বিষয় গুলো মানতে হবে এবং করতে হবে
রাত দশটা, এগারোটার ভেতর আপনাকে ঘুমিয়ে যেতে হবে। কারণ রাত দশটা থেকে দুইটার ভেতর আমাদের শরীরে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয় এবং এই গ্রোথ হরমোনগুলো ফ্যাট বার্নিং এ প্রচুর সহায়তা করে। আপনি যদি এই প্রাকৃতিক বিষয়টি অগ্রাহ্য করেন তবে আপনার ডায়েট অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এবং ভাল ফল পেতে ব্যর্থ হবেন। তারপর খুব সকালে উঠবেন, নামাজ পড়ে (মুসলমানেরা) হাঁটতে বের হবেন। হাঁটার গতি নির্ভর করবে আপনার বয়স অনুসারে। বয়স যদি চল্লিশের ঊর্ধ্বে হয়, স্বাভাবিক গতিতে হাঁটুন ৪০/৬০ মিনিট। বয়স যদি চল্লিশের নিচে হয় তবে জগিং করুন নয়তো জোরে জোরে হাঁটুন ৪০/৬০ মিনিট। তবে খেয়াল রাখবেন হাঁটতে হাঁটতে যেন হাঁপিয়ে না যান বা শ্বাসকষ্ট না হয়। যতটুকু হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন শরীরের সাথে মানিয়ে করুন। দ্রুত মেদ ভুরি কমানোর জন্য ইয়োগা করতে পারেন ( ইয়োগো করার পদ্ধতি YouTube এ দেখে নিন)

উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে সাত থেকে আট দিন নিয়ম করে চলুন। এই সময়টায় আপনার শরীর ফ্যাট বার্নিং বা চর্বি গলাতে শিখে যাবে। তারপর শুরু করুন শুধু সাহরিতে পানি খেয়ে রোজা রাখা, স্বাভাবিক রোজার মতো দিনে পানি এবং সমস্ত কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ইফতার করবেন বাদাম সাথে মাখন এবং শসা দিয়ে সাথে টক ফল রাখতে পারেন। ভিনেগার মিশ্রিত পানি খেয়ে রাতের খাবার উপরে উল্লিখিত অনুরূপ খাবেন এবং অবশ্যই আটটার আগে সমস্ত খাবার শেষ করুন। বেশী ভালো ফল পেতে ইফতারের এক ঘণ্টার ভেতর খাবার শেষ করুন এরপর পানি খেতে থাকুন।

রোজা রাখা শুরু করলে বসা থেকে দাঁড়ালে মাথা সামান্য ঘুরতে পারে, সেক্ষেত্রে সামান্য লবণ মিশ্রিত পানি খাবেন প্রতিদিন এছাড়া এর জন্য ডাবের পানি খেতে পারেন প্রতিদিন একটি কচি ডাব খাওয়া খুবই জরুরী। একটানা যতগুলো ফাস্টিং (রোজা) করতে পারবেন আপনি তত দ্রুত ফল পেতে থাকবেন। (তবে ৭ দিন পর দুইদিন রোজা রাখবেন না ঐ দুইদিনও চেষ্টা করবেন চার ঘণ্টার ভেতর খাবার খেয়ে শেষ করতে ) রোজা রাখলে আপনার শরীরে অটোফেজি শুরু হবে। অটোফেজি হলো, এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শরীর তার খারাপ কোষকে খেয়ে ফেলে এবং সেখান থেকে নতুন কোষের সৃষ্টি করে। বসন্তের নতুন পাতা গজানোর মত; এতে দেখা যাবে আপনি নতুন করে জন্মগ্রহণ করছেন এবং আপনি আপনার হারানো তারুণ্য ফিরে পাচ্ছেন।

কিছুদিনের ভেতর খেয়াল করবেন আপনার ক্ষুধা কমে গেছে । যারা বারবার খেতেন বা খেতে বাধ্য হতেন তাদেরও খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না এর কারণ হলো আপনার শরীরে যে প্রচুর জমাকৃত চর্বি, সেখান থেকেই দেহ তার সমস্ত চাহিদা পূরণ করে নিচ্ছে তাই আর বাড়তি খাবারের প্রয়োজন অনুভব হচ্ছে না। সেটা এক অন্যরকম অনুভূতি। আপনি না খেয়েও বেশ শক্তিশালী হচ্ছেন আগে যেখানে খাবার খেয়েও দুর্বল হতেন ।এই অনুভূতি বলে বোঝানোর মত না।

আর যদি এক টানা রোজা না রাখতে পারেন তবে সপ্তাহে অন্তত দুইটা করে রোজা রাখুন এবং নিয়মিত হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন। আশা করা যায় দেড় দুই মাসের ভেতরেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। তবে অন্যদিনগুলোতে দুইবেলা খাবেন চার ঘণ্টার ব্যবধানে বাকী সময় ওয়াটার ফাস্টিং করবেন অর্থাৎ গ্রিন টি, ভিনেগার, লেবু, সবুজ চা এগুলো খেয়ে খেয়ে বিশ ঘণ্টা।

এছাড়া যারা ডায়াবেটিস এর রোগী আছেন তারা উল্লেখিত নিয়মাবলী ফলো করে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তবে ডায়েট শুরু করার আগে ডায়াবেটিস এর সমস্ত ওষুধ এবং ইনসুলিন বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে টানা রোজা না রাখলেও চলবে। ডায়াবেটিস এর খুব বেশি জটিল রোগী হলে স্যারের পরামর্শ নিয়ে তারপর শুরু করুন। যাই করবেন বুঝে শুনে নিয়মিত ডায়াবেটিস এবং প্রেশার মাপা খুবই জরুরী এবং কোন খাবার শর্করা সেটা জানাও জরুরী ।

আরও যা কিছু করা প্রয়োজন

যতটুকু সম্ভব টেনশন ফ্রী থাকার চেষ্টা করবেন। হাসি খুশি থাকবেন। প্রতিদিন হাঁটার সময় বা পরে সকালের স্নিগ্ধ রোদ গায়ে লাগানোর চেষ্টা করবেন কারণ রোদে থাকা ভিটামিন ডি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। রাত আটটার ভেতর সমস্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এতে করে আপনার ঘুমের কোয়ালিটি ভালো হবে।

সমস্ত বিষয়টি একটি প্যাকেজ প্রোগ্রাম। আপনি যতটুকু মেনে চলবেন ঠিক ততটুকু ফল পাবেন। মুসলমান হলে নিয়মিত নামাজ পড়বেন। বেশী বেশী নফল নামাজ পড়বেন, এতে আপনার ফরজ আদায় হওয়ার পরেও শারীরিক কিছু ব্যায়াম হবে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আর সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখুন এবং ভরসা রাখুন। অবশ্যই আপনি সফলকাম হবেন। যেমনটি আলহামদুলিল্লাহ আমার মতো অনেকেই হয়েছেন।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/544 ,   Print Date & Time: Friday, 6 June 2025, 08:32:01 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh