বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। এর ফলে একদিনের ব্যবধানে আবারও বাড়ানো হয়েছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম—যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে। বুধবার বাজুসের “স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং” এর বৈঠকে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬ হাজার ৯০৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৬ হাজার ৫৯০ টাকা, যা এখন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯৪ টাকা।
১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫ হাজার ৬৫৭ টাকা, নতুন দাম ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৭ টাকা।
এছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৪ হাজার ৮২৮ টাকা, যা এখন ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড গড়েছে দেশজুড়ে।
বারবার বেড়েছে দাম
গত কয়েক দিনে টানা পাঁচবার স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে।
-
৮ অক্টোবর: ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা।
-
৭ অক্টোবর: প্রতি ভরি ৩,১৫০ টাকা বাড়িয়ে দাম দাঁড়ায় ২ লাখ ৭২৬ টাকায়।
-
৫ অক্টোবর: দাম ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা।
এভাবে কয়েক দিনের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার টাকায়—যা বাংলাদেশে আগে কখনও দেখা যায়নি।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার এবং আমদানি ব্যয়ের চাপ মিলিয়ে এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছে।
রুপার দামও বেড়েছে
শুধু স্বর্ণ নয়, রুপার দামও বেড়েছে।
২২ ক্যারেট রুপার প্রতি ভরি দাম ৩২৬ টাকা বাড়িয়ে এখন ৪ হাজার ৯৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২১ ক্যারেট রুপার দাম ৪ হাজার ৭৪৭ টাকা,
১৮ ক্যারেট ৪ হাজার ৭১ টাকা,
আর সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ৩ হাজার ৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে ৮ অক্টোবর রুপার দামও এক হাজার টাকার বেশি বেড়েছিল।
সাধারণ মানুষের প্রভাব
স্বর্ণের দাম এমন দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতা, মধ্যবিত্ত ও নবদম্পতিদের জন্য তা হয়ে উঠেছে একপ্রকার বিলাসিতা। বিয়ের মৌসুম ঘনিয়ে এলেও ক্রেতারা এখন দোকানে যাচ্ছেন হিসাব কষে, অনেকেই পুরোনো স্বর্ণ বিক্রি করে নতুন কেনার চিন্তা বাদ দিচ্ছেন।
এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন,
“এভাবে প্রতিদিন দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের জন্য স্বর্ণ ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এখন অনেকেই ছোট গয়না কিনছেন বা বিকল্প হিসেবে রুপা বেছে নিচ্ছেন।”
বাজুসের মতে, তারা শুধু আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তন অনুসারে দাম সমন্বয় করছে। তবে বাজারে মুদ্রাস্ফীতি ও ডলারের ওঠানামা এর বড় ভূমিকা রাখছে।
শেষ কথা
একদিনের ব্যবধানে টানা কয়েক দফা দাম বাড়ায় দেশে স্বর্ণ এখন শুধু গয়না নয়, একপ্রকার বিনিয়োগের প্রতীক হয়ে উঠছে।
তবে সাধারণ মানুষের কাছে এই রেকর্ড মূল্য এক প্রকার অর্থনৈতিক চাপের প্রতীক।
সবমিলিয়ে—স্বর্ণের ঝলক এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দামি হয়ে উঠেছে।