• হোম > রাজনীতি > গণভোটের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্যে ব্যর্থ রাজনৈতিক দলগুলো

গণভোটের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্যে ব্যর্থ রাজনৈতিক দলগুলো

  • বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২২
  • ৩২

---

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও সময়, প্রক্রিয়া এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব অবস্থানে অনড় রয়েছে।

এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে সমন্বয় করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে গণভোটের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে কমিশন এই বিষয়ে সরকারের কাছে চূড়ান্ত পরামর্শ দেবে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। দুপুরের পর শুরু হওয়া তৃতীয় পর্বের পঞ্চম দিনের বৈঠক রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেষ হয়। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “দল এবং জোটের পক্ষ থেকে মত দেওয়া হয়েছে যে, দলগুলো এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতকে বিবেচনা করে ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং সরকারকে সুস্পষ্ট পরামর্শ দেবে। আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং গত পাঁচ দিনের রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ প্রদান করব।”

বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে—
১) একটি আদেশ জারি করা হবে;
২) আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করা হবে;
৩) গণভোটে দুইটি আলাদা প্রশ্ন থাকবে—একটি যেখানে ঐকমত্য আছে এবং একটি যেখানে নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত আছে;
৪) নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে;
৫) গণভোটের অনুমোদনের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন কার্যকর হবে।


গণভোটের সময় নিয়ে মতবিরোধ

জাতীয় নির্বাচনের একই দিনে গণভোট আয়োজনের পক্ষে বিএনপি। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের অল্প সময় বাকি। আলাদা গণভোট আয়োজন ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হবে। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে জনগণ একাধিক ব্যালটে ভোট দিতে পারবে। এটি আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে নতুন কিছু নয়।”

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পৃথকভাবে নভেম্বর মাসে জুলাই সনদের ওপর গণভোট চায়। নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “দুইটি নির্বাচন একসঙ্গে হলে জটিলতা তৈরি হবে। জনগণ গ্রহণ করবে কি করবে না—এটা অনিশ্চিত থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে আলাদা গণভোট করাই যুক্তিসঙ্গত।”


নোট অব ডিসেন্ট ও আইনগত জটিলতা

বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে। ডা. তাহের বলেন, “নোট অব ডিসেন্ট কোনো সিদ্ধান্তের অংশ নয়। এটি কেবল ব্যক্তিগত মতের রেকর্ড। জাতির ভোটের ম্যান্ডেটের জন্য এটি প্রভাব ফেলতে পারবে না।”

সংবিধান অনুযায়ী আদেশ বা অধ্যাদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াত একমত নয়। জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির প্রস্তাব করেন, জুলাই ঘোষণার ধারার ভিত্তিতে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এর জবাবে বিএনপি মনে করে, সংবিধান অনুযায়ী ৯৩ অনুচ্ছেদে কোনো সংবিধান আদেশ জারি করা সম্ভব নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি গণভোট আয়োজনের পক্ষে, উল্লেখ করে বলেছেন, ইতিবাচক ফলাফল হলে পরবর্তী সংসদ সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা পাবে।


সংলাপ ও অংশগ্রহণ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করে ১৫ ফেব্রুয়ারি। ৮ অক্টোবর পর্যন্ত তারা তিন দফায় ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করেছে। বুধবারের সংলাপে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “কমিশনের মেয়াদ ১৫ অক্টোবর শেষ হবে। তিন-চতুর্থাংশের বেশি দল ইতোমধ্যে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করি বাকি দলগুলোর নামও শিগগির পাওয়া যাবে। আমরা চাই এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় আগামী সাত দিনের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হবে। ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।”

এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা রাজনৈতিক সংলাপ, বিশেষজ্ঞ মতামত এবং জনগণের অংশগ্রহণকে সমন্বয় করছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5386 ,   Print Date & Time: Friday, 10 October 2025, 09:09:32 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh