• হোম > বাংলাদেশ > বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য

  • বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৬
  • ৩০

---

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ বক্তব্য তাদের বিষয় নয়; এটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য দেশের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য কূটনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।”


‘বাংলাদেশ নিজের পথেই এগোচ্ছে’

তৌহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ নিজেরাই তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়া যথেষ্ট পরিণত হয়েছে— বাইরের পরামর্শ বা চাপের প্রয়োজন নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো দেশের মন্তব্য কাম্য মনে করি না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র— আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া আমাদের নিজেদেরই বিষয়।”


ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মন্তব্য

এর আগে গত সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশি কূটনৈতিক সংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, “বাংলাদেশে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় ভারত। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের রায় নিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদের সঙ্গে কাজ করবে ভারত।”

মিশ্রির এই বক্তব্য বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।


কূটনৈতিক শালীনতা প্রসঙ্গ

পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি স্বাধীন দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে অন্য দেশের মন্তব্য কূটনৈতিক শালীনতার পরিপন্থী।
সাবেক রাষ্ট্রদূতরা মনে করেন, প্রতিবেশী সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ঠ হোক না কেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মতামত দেওয়া সবসময়ই সংবেদনশীল।

একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও বহুমাত্রিক। কিন্তু এমন মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সৌহার্দ্যের পরিবেশে অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে।”


বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক সবসময়ই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লির মন্তব্য ঢাকায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকা কূটনীতিকরা মনে করছেন, পারস্পরিক সম্মান ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাই সম্পর্ককে টেকসই করবে।


অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট

তৌহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ধারায় অগ্রসর হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। বিদেশি বন্ধুরা যদি আমাদের অগ্রযাত্রায় শুভকামনা জানায়, আমরা তা স্বাগত জানাই— তবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পরামর্শ নয়।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করা, বিদেশি পরামর্শ নয়।”


জনমতের প্রতিক্রিয়া

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি মন্তব্যে জনগণও সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশের জনগণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তারা চায় দেশের সিদ্ধান্ত দেশে হোক।”


সার্বিক মূল্যায়ন

সর্বশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এই দৃঢ় অবস্থান বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্বাতন্ত্র্য ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষার দিকেই ইঙ্গিত করে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার সরকার শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ‘সমতা ও পারস্পরিক সম্মান’ নীতিতে বিশ্বাসী। এই অবস্থান বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বাস্তব প্রতিফলন।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5382 ,   Print Date & Time: Friday, 10 October 2025, 08:23:44 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh