• হোম > বিজ্ঞান > পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল ২০২৫: ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিংয়ে মার্কিন তিন বিজ্ঞানীর কীর্তি

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল ২০২৫: ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিংয়ে মার্কিন তিন বিজ্ঞানীর কীর্তি

  • বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৩
  • ৩৩

---

এবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিনজন মার্কিন বিজ্ঞানী – জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. দ্যভোরে এবং জন মার্টিনিস। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাঁদের এই পুরস্কার ‘ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং’ এবং বৈদ্যুতিক সার্কিটে শক্তি কোয়ান্টাইজেশন গবেষণার জন্য দেওয়া হয়েছে।

সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে, তারা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জটিল নিয়মগুলোকে এমনভাবে পরীক্ষা করেছেন যে তা **দৃশ্যমান জগতে (বড় পরিসরে)**ও প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ কোয়ান্টামের অদ্ভুত, অমার্জনীয় এবং প্রায় অবিশ্বাস্য বৈশিষ্ট্যগুলো এখন আমরা চোখে দেখতে সক্ষম হয়েছি।


কোয়ান্টাম বলবিদ্যা: অদ্ভুত জগৎ

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা হল এক অদ্ভুত বিজ্ঞান, যেখানে উপপরমাণু কণাগুলো (যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন) এমনভাবে আচরণ করে, যা সাধারণ বাস্তব জগতে আমরা অনুভব করতে পারি না।

  • মাইক্রোস্কোপিক জগৎ: ক্ষুদ্র কণার জগৎ, যেখানে কোয়ান্টাম নিয়ম কাজ করে।

  • ম্যাক্রোস্কোপিক জগৎ: আমাদের দেখা এবং স্পর্শ করা দৈনন্দিন জগৎ।

নোবেলজয়ীরা দেখিয়েছেন যে, কোয়ান্টামের সুড়ঙ্গ প্রভাব (Quantum Tunneling) দৃশ্যমান জগতে প্রয়োগযোগ্য, যা আগে কেবল ক্ষুদ্র জগতে সীমাবদ্ধ ছিল।


বৈপ্লবিক পরীক্ষা

বিজ্ঞানীরা সুপারকন্ডাক্টর বা অতিপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করে একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট বানিয়েছেন। সার্কিটে দুটি সুপারকন্ডাক্টরের মাঝে একটি পাতলা বাধা (ইনসুলেটর) রাখা হয়েছে।

পরীক্ষার ফলাফল:

  • কুপার পেয়ার নামে জোড়া ইলেকট্রনগুলো একক কণার মতো আচরণ করেছে।

  • শূন্য ভোল্টেজ অবস্থায় থাকা সিস্টেম হঠাৎ ভোল্টেজ উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।

  • শক্তি নির্দিষ্ট পরিমাণে শোষণ ও নিঃসরণ করেছে, যা ইলেকট্রনের কক্ষপথ পরিবর্তনের মতো।

অর্থাৎ, কোয়ান্টামের ক্ষুদ্র জগতের আচরণ বড় জগতে দেখা গেছে, যা ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং নামে পরিচিত।


পেছনের বিজ্ঞান

১৯২৮ সালে পদার্থবিদ জর্জ গ্যামো প্রথম বুঝেছিলেন, পরমাণুর নিউক্লিয়াসের শক্তির বাধা প্রোটন ও নিউট্রনকে আটকাতে পারে, কিন্তু মাঝে মাঝে কণাগুলো বাধা ভেদ করে বেরিয়ে আসে – এটিই টানেলিং।

এরপর ব্রায়ান জোসেফসন দেখিয়েছেন, সুপারকন্ডাক্টরের দুটি অংশ পাতলা বাধা দিয়ে যুক্ত করলে কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটে। এর নামকরণ করা হয় জোসেফসন জাংশন। এই তাত্ত্বিক কাজই পরবর্তীতে জন ক্লার্ক, মিশেল দ্যভোরে ও জন মার্টিনিসের পরীক্ষার ভিত্তি তৈরি করেছে।


প্রযুক্তিগত গুরুত্ব

নোবেলজয়ীদের গবেষণার মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে:

  • শক্তি কোয়ান্টাইজেশন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে কিউবিট, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের তথ্যের একক।

  • পুরো সিস্টেমটি কৃত্রিম পরমাণু হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতে আরও গবেষণা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়ক হবে।

সংক্ষেপে, তারা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অদ্ভুত ও অসম্ভব মনে হওয়া নিয়মগুলোকে বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য প্রমাণ করেছেন, যা আমাদের দৈনন্দিন প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যতের উদ্ভাবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাকে বিপ্লবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণা শুধুমাত্র তাত্ত্বিক নয়, বরং কোয়ান্টাম কম্পিউটার, উচ্চ-সংশ্লিষ্ট সেন্সর, এবং আধুনিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে বিপুল প্রভাব ফেলতে পারে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5356 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 03:48:39 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh