• হোম > রাজনীতি > ১৭ বছর পর তারেক রহমান: রাজনীতিতে নতুন মানবিক সুর

১৭ বছর পর তারেক রহমান: রাজনীতিতে নতুন মানবিক সুর

  • বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৪
  • ৬৩

---

প্রায় ১৭ বছর পর গণমাধ্যমে দেখা গেল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। দীর্ঘ সময়ের নীরবতার পর তাঁর কণ্ঠে যে দৃঢ়তা, শালীনতা ও মানবিক ভাব প্রকাশ পেয়েছে—তা যেন রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি শুধু রাজনীতির বিশ্লেষণই করেননি; বরং তুলে ধরেছেন ন্যায়, আত্মত্যাগ ও জাতীয় ঐক্যের মানবিক আহ্বান।


অভিজ্ঞতার আলোয় আত্মবিশ্বাস

তারেক রহমানের পূর্বের টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের তুলনায় এবার তিনি অনেক বেশি পরিণত, আত্মবিশ্বাসী ও স্বচ্ছভাষী।
অসংখ্য অনির্ধারিত প্রশ্ন, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সব ধরনের জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হয়েও তাঁর উত্তরে ছিল দৃঢ়তা ও সৌজন্য—যা বর্তমান রাজনীতিতে বিরল।
প্রচলিত রাজনীতির মতো পাশ কাটিয়ে যাওয়া নয়; বরং তিনি প্রতিটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন অহংবর্জিত, চিন্তাশীল ও আত্মসম্মানজনক ভঙ্গিতে।


ন্যায়বিচারের আহ্বান, প্রতিশোধ নয়

এক পর্যায়ে পতিত স্বৈরাচার ও নির্যাতনের প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে বলেন,
“নির্যাতনকারী প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। এটা প্রতিশোধের বিষয় নয়, এটা ন্যায়ের কথা, আইনের কথা।”
তাঁর এই অবস্থান শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মানবিক বার্তা।


জাতীয় ঐক্যের সুর

সাক্ষাৎকারজুড়ে তাঁর কথায় ছিল জাতীয় ঐক্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের গুরুত্ব।
তিনি প্রতিপক্ষকে আক্রমণ না করে বরং ভদ্রোচিত ভঙ্গিতে মত প্রকাশ করেছেন।
রাজনীতির চর্চায় যে শোভনতা ও সহনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছিল, তাঁর বক্তব্যে যেন সেটিই ফিরে এসেছে নতুন করে।


দেশে ফেরার অঙ্গীকার

দীর্ঘ নির্বাসনের পর দেশে ফেরা নিয়ে যে প্রশ্ন বহুদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিল, সেই উত্তরও এবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি—
“কিছু সংগত কারণে এখনো দেশে ফেরা হয়নি। তবে এখন ফেরার সময় এসেছে। দ্রুতই দেশে ফিরব ইনশা আল্লাহ।”
এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং এক জননেতার মানবিক অঙ্গীকার, যিনি জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ পুনর্গঠনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।


গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব জনগণের

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন,
“এখানে মাস্টারমাইন্ড কোনো ব্যক্তি বা দল নয়, দেশের জনগণই এই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড।”
এই মন্তব্যে তাঁর জনগণকেন্দ্রিক দর্শন প্রকাশ পায়, যেখানে ক্ষমতা নয়, জনগণই পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।


দলের প্রার্থী নির্বাচনে নতুন ধারা

আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য প্রথাগত রাজনীতির বাইরে—
“মনোনয়ন তাঁকেই দেব, যিনি জনগণের সঙ্গে আছেন, এলাকার সমস্যা জানেন, তরুণ-নারী-ছাত্র সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।”
এ কথায় ফুটে উঠেছে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ধারণা, যা রাজনীতিতে নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।


মানবিক ক্ষত ও পারিবারিক ত্যাগ

রাজনৈতিক জীবনে তাঁর পরিবারের ত্যাগের কথাও উঠে এসেছে আবেগঘনভাবে—
জেল থেকে ফিরে মা খালেদা জিয়া অসুস্থ, ভাই আরাফাত রহমান কোকো প্রয়াত, স্ত্রী ও কন্যা বঞ্চিত হয়েছেন স্বাভাবিক জীবনের আনন্দ থেকে।
নিজে থেকেছেন হাজার মাইল দূরে, তবু দল ও দেশের প্রতি অঙ্গীকারে অটল ছিলেন তিনি।
এ যেন এক নেতার মানবিক যন্ত্রণা ও দৃঢ়তার একসঙ্গে সহাবস্থান।


নতুন প্রজন্মের প্রতি আশা

তাঁর বক্তব্যে তরুণ প্রজন্মের প্রতি এক অনুপ্রেরণা রয়েছে—
যারা রাজনীতিতে মানবিক মূল্যবোধ, দায়িত্বশীলতা ও দেশপ্রেম খুঁজে ফিরছে, তাঁদের কাছে এ সাক্ষাৎকার হয়ে উঠেছে এক আশার বার্তা।


শেষকথা

রাজনীতির দীর্ঘ অন্ধকারের পরে যদি কোনো আলো দেখা যায়, সেটি হতে পারে মানবিক রাজনীতির পুনর্জন্ম।
তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকারে যেমন দৃঢ়তা আছে, তেমনি রয়েছে সৌজন্য, আত্মসমালোচনা আর মানবিক স্পর্শ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে হয়তো এই সাক্ষাৎকার চিহ্ন রেখে যাবে “গণতন্ত্রে মানবিকতার প্রত্যাবর্তনের” এক সূচনা হিসেবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5336 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:08:02 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh