• হোম > বিদেশ > গাজার রক্তমাখা দুই বছর: স্মরণ, ক্ষোভ ও মানবতার আর্তনাদ

গাজার রক্তমাখা দুই বছর: স্মরণ, ক্ষোভ ও মানবতার আর্তনাদ

  • মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৩৬
  • ৩৪

---

দুই বছর আগে আজকের এই দিনেই—৭ অক্টোবর—গাজার ঘনবসতিপূর্ণ ছিটমহল থেকে উঠে এসেছিল এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ, যা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে। সেই আক্রমণ, সেই প্রতিশোধ, আর তারপর থেকে টানা দুই বছরের রক্ত ও আগুনের ইতিহাস—সবকিছু মিলিয়ে আজ গাজা যেন এক স্থায়ী মানবিক ট্র্যাজেডির প্রতীক হয়ে উঠেছে।


শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবরেই

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে হামাসের নেতৃত্বে একযোগে আক্রমণ চালানো হয় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের শহর ও গ্রামগুলোতে।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রাণ হারান প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিক। বন্দি করা হয় ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে, যাদের মধ্যে ৪৮ জন এখনও গাজায় বন্দি আছেন।

এর প্রতিশোধে ইসরায়েল শুরু করে ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান—যা আজও থামেনি।


গাজার মৃত্যুপুরী

দুই বছরের এই পাল্টা আক্রমণে গাজা এখন প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপ। জাতিসংঘের হিসেবে, ইসরায়েলি বোমা ও অবরোধে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, যার অর্ধেকই নারী ও শিশু।
প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে তারা।
খাদ্য, পানি, ওষুধ—সব কিছুর ঘাটতি। হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, শিশুরা বইয়ের বদলে বহন করছে মৃত্যুর ভয়।

জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্ট ভাষায় বলেছে—

“গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল একটি গণহত্যা চালাচ্ছে।”

কিন্তু ইসরায়েল সেই সিদ্ধান্ত একচেটিয়াভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, বিশ্বের বিবেককে উপেক্ষা করে।


স্মরণের ভিন্নতা—দুই পৃথিবীর দুই চিত্র

দুই বছর পূর্তিতে ইসরায়েলে চলছে স্মরণানুষ্ঠান, ফুলেল শ্রদ্ধা আর সঙ্গীতের আয়োজন। দক্ষিণাঞ্চলের রিম এলাকায় নোভা উৎসবের নিহতদের স্মরণে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান।

তবে সরকারিভাবে দেশটি পালন করবে ১৬ অক্টোবর, কারণ ইসরায়েল তাদের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন করে হিব্রু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী।

অন্যদিকে, গাজায় আজও বাজছে বোমা।
যেখানে এক প্রান্তে মোমবাতি জ্বলে, অন্য প্রান্তে মানুষ কবর খুঁড়ে তাদের প্রিয়জনকে মাটি দিচ্ছে।


বেসরকারি স্মরণ ও মায়ের কান্না

ইসরায়েলের নাগরিক সংগঠন ‘কাম’—যাদের সদস্যরা গাজার কাছাকাছি বসবাসকারী ও হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ—তাদের উদ্যোগে এক সঙ্গীতানুষ্ঠান হয়েছে।
এই আয়োজনে সরকার কোনো অর্থ দেয়নি; সাধারণ মানুষের অনুদানেই এটি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ইসরায়েলি শিল্পীরা, আর বক্তব্য দিয়েছেন গাজায় বন্দি থাকা জিম্মিদের মায়েরা ও মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা।

সিএনএনের তথ্যমতে,

“এই স্মরণানুষ্ঠান ইসরায়েলের জন্য শুধু শোক নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বয়ে এনেছে—রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিবাদ।”


মানবিক বিশ্বে এক অবিচল প্রশ্ন

দুই বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু যুদ্ধ থামেনি। গাজায় এখনো শিশুরা ঘুমায় ড্রোনের শব্দে, মানুষ হাঁটে ধুলায় ভরা রাস্তায়, আর জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করছে—

“আরেকটি প্রজন্ম হয়তো বেঁচে ফিরবে না।”

গাজা এখন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, বরং মানবতার এক রক্তাক্ত প্রতিচ্ছবি।
এক প্রান্তে উৎসব, অন্য প্রান্তে মৃত্যু—এই বৈপরীত্যই যেন আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লজ্জা।


শেষ কথা

৭ অক্টোবর—এই দিনটি শুধু একটি যুদ্ধের সূচনা নয়, বরং বিশ্বমানবতার পরীক্ষার দিন।
ইতিহাস হয়তো একদিন বলবে, কারা মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল, আর কারা নীরব ছিল—যখন শিশুরা বাঁচার অধিকার চেয়েছিল।

“গাজা এখন এক খোলা কবরস্থান, কিন্তু এর ভেতর থেকেই জন্ম নিচ্ছে প্রতিরোধের নতুন মানে—মানবতার।”


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5312 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 05:32:59 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh