• হোম > বাংলাদেশ > ক্রিকেটার থেকে সফল কৃষক রাফছান জানী

ক্রিকেটার থেকে সফল কৃষক রাফছান জানী

  • মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:০০
  • ৩৬

---

একসময় মাঠে বল ঘোরাতেন, এখন ব্যাগে ফলান আদা। বগুড়ার আদমদীঘির চাটখইর গ্রামের রাফছান জানী—একজন সাবেক ক্রিকেটার, যিনি জীবনের ব্যাট ঘুরিয়েছেন কৃষিক্ষেত্রে। তাঁর গল্প শুধু পরিশ্রমের নয়, বরং এক অনুপ্রেরণার কাহিনি—যা তরুণদের শেখায়, জীবনের যে কোনো ব্যর্থতা থেকেই শুরু হতে পারে নতুন জয়ের গল্প।


ক্রিকেট থেকে চাষাবাদে

মাত্র ৩২ বছর বয়সী রাফছান জানী একসময় খেলতেন ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে। ক্রিকেটই ছিল তাঁর স্বপ্ন, পেশা আর ভালোবাসা। কিন্তু ইনজুরি ও পারিবারিক দায়িত্বের কারণে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। পড়াশোনা শেষে চাকরিও করেন, কিন্তু অল্প বেতনে সংসার চলছিল না। একসময় সব ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত হতে।

রাফছানের কথায়,

“জীবন থেমে যায়নি, শুধু দিক বদলেছে। ক্রিকেট আমাকে শৃঙ্খলা শিখিয়েছে, কৃষি আমাকে দিয়েছে সাফল্য।”


ইউটিউবে দেখা এক ভিডিও বদলে দিল জীবন

একদিন ইউটিউবে ‘ব্যাগিং পদ্ধতিতে আদা চাষ’-এর ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন নিজে চেষ্টা করবেন। বাড়ির পাশে পতিত জমিতে শুরু করেন এক হাজার জিও ব্যাগে আদা চাষ। খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি করে পান ৪৭ হাজার টাকা। সেই অপ্রত্যাশিত সাফল্যই তাঁকে দিয়েছে নতুন সাহস।

এ বছর তিনি দুই একর জমিতে ১০ হাজার ব্যাগে আদা চাষ করেছেন। এখন প্রতি ব্যাগে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ফলন পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ২০০ কেজি আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। আশা করছেন, মৌসুম শেষে ৭ লাখ টাকার বেশি লাভ হবে তাঁর।


ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ—সহজ ও লাভজনক

রাফছান জানীর ভাষায়,

“এই পদ্ধতিতে খরচ কম, জায়গা কম লাগে, আবার রোগও কম হয়। সামান্য শ্রমে অনেক বেশি ফলন পাওয়া যায়।”

ব্যাগিং পদ্ধতিতে মাটির সঙ্গে গোবর সার, অটো মিলের ছাই, বালু ও দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে বস্তায় ভরতে হয়। এরপর আদার কন্দ বপন, সেচ ও পরিচর্যা। কয়েক মাস পরেই ব্যাগ ভরে ওঠে তাজা আদায়।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন,

“এ পদ্ধতিতে আলাদা জমি লাগে না। পরিত্যক্ত জায়গাতেই ব্যাগ বসিয়ে চাষ করা যায়। অতিবৃষ্টি বা ঝড়ে সহজে সরানোও সম্ভব। মাটিবাহিত রোগ কম হয়, তাই ব্যাগিং পদ্ধতিতে আদা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।”


রাফছানের অনুপ্রেরণায় নতুন কৃষক

রাফছানের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে চাটখইর গ্রামের তরুণরা এখন ব্যাগে আদা চাষে ঝুঁকছেন।

  • ফারুক হোসেন শুরু করেছেন ৩০০ ব্যাগে,

  • সাইদুল ইসলাম খান, একজন স্কুলশিক্ষক, চাষ করছেন ৫০০ ব্যাগে।

গ্রামের পরিত্যক্ত জমি এখন সবুজে ভরে উঠছে। কৃষিতে নতুন উদ্ভাবনের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন ও চিন্তাধারা।


আদার ঘাটতি পূরণে অবদান

বাংলাদেশে বছরে আদার চাহিদা ৪ লাখ ৮১ হাজার টন, কিন্তু উৎপাদন হয় মাত্র ২ লাখ ২৪ হাজার টন। ঘাটতি পূরণে প্রতিবছর আমদানি করতে হয় প্রায় ৯০ হাজার টন আদা।
এ অবস্থায় ব্যাগিং পদ্ধতির মতো উদ্যোগ স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

ফরহাদ হোসেন জানান,

“আদমদীঘিতে এ মৌসুমে প্রায় পাঁচ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে, যার বেশির ভাগই ব্যাগিং পদ্ধতিতে। কৃষি বিভাগ রাফছানের মতো উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।”


মানবিক বার্তা

রাফছান জানীর গল্প শুধু কৃষি সাফল্যের নয়—এটি এক মানবিক প্রতিরোধের গল্প। যেখানে জীবনের ব্যর্থতা থেকেও নতুন আশার আলো ফোটে। তিনি প্রমাণ করেছেন, সুযোগ না পেলে তৈরি করতে হয় নিজের পথ, নিজের ভবিষ্যৎ।

“একসময় আমি খেলোয়াড় ছিলাম মাঠে, এখন খেলছি জমিতে। পার্থক্য শুধু বলের জায়গায় আদা এসেছে, কিন্তু জয়ের আনন্দটা একই রকম।” — রাফছান জানী


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/5310 ,   Print Date & Time: Saturday, 11 October 2025, 01:09:22 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh