সাংবিধানিক বিধি উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইলিনয়েস রাজ্য প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ ঘটনাকে নতুন এক রাজনৈতিক সংঘাতের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) ইলিনয়েসের উচ্চ আদালতে দায়ের করা মামলায় বলা হয়— প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংবিধানের ইনসারেকশন অ্যাক্টের অপব্যাখ্যা করে অঙ্গরাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করেছেন।
গভর্নর জে. বি. প্রিৎজকার সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
“ইলিনয়েস ও শিকাগোতে সেনা মোতায়েনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী এবং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া।”
ডেমোক্রেটিক দলনিয়ন্ত্রিত ইলিনয়েসের নেতারা অভিযোগ করেছেন— ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে রাজ্যে সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঘটনার পটভূমি:
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ-কে নির্দেশ দেন— ইলিনয়েসে ন্যাশনাল গার্ডের ৩০০ সদস্য মোতায়েন করতে। পরে টেক্সাস থেকে আরও ৪০০ সেনা সদস্য পাঠানো হয় শিকাগো ও আশপাশের এলাকায়।
ট্রাম্প বলেন,
“এটি নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনার কিছু নেই। অস্থিরতা ও বিদ্রোহ দমনের জন্য সংবিধানে ইনসারেকশন অ্যাক্ট ১৭৯২ অনুযায়ী সেনা মোতায়েনের বিধান রয়েছে।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের দাবি— ঐ আইনে স্পষ্ট বলা আছে, সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা কেবল তখনই প্রয়োগযোগ্য, যখন কোনো অঙ্গরাজ্যে “চরম বিদ্রোহ” শুরু হয় এবং স্থানীয় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ হারায়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
মামলার পর গভর্নর প্রিৎজকার বলেন,
“শিকাগোকে ট্রাম্প যে ‘নরকের গর্ত’ ও ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ বলেছেন, তা কেবল অপমানজনকই নয়— এটি তাঁর সামরিক শক্তিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের প্রমাণ।”
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ছিল আরও তীব্র। তিনি বলেন,
“ইলিনয়েস প্রশাসন ও মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। শিকাগো এখন বিশ্বের সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ শহরগুলোর একটি। আফগানিস্তানেও হয়তো এমন অপরাধের মাত্রা দেখা যায় না।”
বিশ্লেষণ:
এই মামলা যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের সম্পর্ক নিয়ে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল আইনি সংঘাত নয়, বরং “রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য” পুনর্মূল্যায়নের সূচনা।
ডেমোক্রেটিক রাজ্যগুলোর অনেক নেতা এখন আশঙ্কা করছেন— ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামরিক ও নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করতে পারেন।