বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ভবিষ্যতের বিএনপি হবে গণতন্ত্রের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো একটি জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক দল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—আর সেই কাজেই বিএনপি নিজেদের নতুনভাবে প্রস্তুত করছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিবিসি বাংলায় প্রচারিত এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
জনগণের রাজনীতি ও জবাবদিহিতার অঙ্গীকার
তারেক রহমান বলেন,
“আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য—জনগণ, দেশ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব। অতীতের ভালো কাজগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বুনিয়াদ গড়তে চাই।”
তিনি মনে করেন, রাজনীতিতে জবাবদিহিতা মানে শুধু নেতৃত্বের স্বচ্ছতা নয়, বরং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা।
“অভিযোগ থাকতেই পারে। অভিযোগকে আমরা বিবেচনায় রাখব। তবে সুযোগ পেলে প্রমাণ করব, জবাবদিহিতা কেমন হওয়া উচিত। এটা একদিনে সম্ভব নয়, ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
তারেক রহমান বলেন, রাজনীতি যদি জনকল্যাণে হয়, তাহলে নাগরিকদেরও তাতে অংশীদার হতে হবে।
“দেশ গঠনের কাজে শুধু রাজনীতিক নয়, সাধারণ মানুষকেও যুক্ত হতে হবে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে।”
অতীতের গর্ব, ভবিষ্যতের দিশা
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের অর্থনীতির দুটি প্রধান খাত—গার্মেন্টস শিল্প এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স—দুটিরই সূচনা হয়েছিল বিএনপি আমলে।
“শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম। এমনকি সেই সময় বাংলাদেশ বিদেশে খাদ্য রপ্তানিও করেছিল।”
তিনি আরও বলেন,
“যখন দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব দল নিষিদ্ধ ছিল, তখন বিএনপির হাত ধরেই বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরেছিল। সেই ইতিহাস আমাদের অনুপ্রেরণা।”
তারেক রহমানের মতে, নতুন প্রজন্মের জন্য ইতিহাস জানা যেমন জরুরি, তেমনি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করাও সময়ের দাবি।
প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা ও পরিবার
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাসজীবন নিয়ে তারেক রহমান বলেন,
“এই দীর্ঘ সময় আমি দেশের বাইরে আছি। পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া এত দূর থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হতো না। আমার স্ত্রী ও সন্তানকে ধন্যবাদ জানাই—তাদের সহায়তা না থাকলে এই কঠিন কাজ আরও কঠিন হয়ে যেত।”
তিনি বলেন, প্রবাসে থেকে তিনি বুঝেছেন—প্রশাসনের জবাবদিহিতা, নাগরিক অধিকার এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি কীভাবে একটি দেশকে এগিয়ে নিতে পারে।
“যুক্তরাজ্যে থেকে ভালো যা কিছু দেখেছি বা শিখেছি, সুযোগ পেলে সেই অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই।”
দলীয় ত্যাগী নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
তারেক রহমান সাক্ষাৎকারে দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের প্রশংসা করেন।
“নানা বাধা-বিপত্তি, দমন-পীড়নের মধ্যেও যারা দলকে সংগঠিত রেখেছেন, রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন, জনগণের দাবির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন—আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।”
তিনি বলেন, নতুন বিএনপি হবে এমন একটি দল, যেখানে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে মানুষ, মানবিকতা ও জবাবদিহিতা।
বিশ্লেষণ
তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকারকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা দেখছেন “নতুন বিএনপির রূপরেখা ঘোষণার ইঙ্গিত” হিসেবে।
বহু বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত এই নেতার বক্তব্যে যেমন অতীতের গৌরব তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও এক ধরনের “রাজনৈতিক পুনর্জন্মের সংকল্প” ফুটে উঠেছে।
বিশেষ করে, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক ভূমিকা স্মরণ করে তিনি যে “জবাবদিহিতার নতুন সংস্কৃতি”র কথা বলেছেন, তা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে একটি বড় দিকনির্দেশ হতে পারে।