বাংলাদেশে আগামীতে বজ্রপাতের ঘনত্ব ও তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামোর অভাবের কারণে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকার জনগণ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল মান্নান সোমবার বাসসকে বলেন, গ্রামীণ অঞ্চলের কৃষক, মৎস্যজীবী এবং বাইরের কাজে নিযুক্ত মানুষরা যথাযথ সুরক্ষা না থাকায় উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি জানান, চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঘন ঘন বজ্রপাতজনিত দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং বিজলি চমকানোর হার আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
ড. মান্নান পূর্বাভাস দেন, যেখানে আগে কম বজ্রপাত ঘটত, সেখানে ভবিষ্যতে এই ঘটনা ঘনঘন ঘটতে পারে। তিনি বলেন, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে; প্রতি বছর ৩০০-এর বেশি মানুষ বজ্রপাতে মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বজ্রপাতপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে একটি।
বিশেষজ্ঞ জানান, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, আঞ্চলিক দূষণ বৃদ্ধি, উচ্চ আর্দ্রতা, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতার সংমিশ্রণ প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাতের তীব্রতা বাড়াচ্ছে। এছাড়া গ্রামীণ এলাকায় লম্বা গাছ কেটে ফেলার ফলে প্রাকৃতিক সুরক্ষা হ্রাস পেয়ে ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে।
গবেষণা থেকে দেখা গেছে, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বিশেষ করে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বজ্রপাতের হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বছরে প্রায় ১২০টি বজ্রপাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ মাটিতে আঘাত হানেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হলো সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট।
ড. মান্নান বলেন, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে উচ্চ আর্দ্রতা, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতার কারণে ঘন ঘন বজ্রপাতের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়। এই অবস্থায় গ্রামীণ অঞ্চলের জনগণকে যথাযথ সতর্কতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, না হলে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে না।